নিউটনিয়ান বলবিদ্যা

এই অধ্যায়ের সকল টপিকস সমূহ

  • টপিকস - 4.1:

    মৌলিক বল এবং বলের একীভূতকরণ ।

  • টপিকস - 4.2:

    ভরবেগ এবং ঘাত বল ।

  • টপিকস - 4.3:

    নিউটনের সূত্র, বল, জড়তা, বলের ঘাত এবং সংঘর্ষ ।

  • টপিকস - 4.4:

    বাস্তব জীবনে নিউটনিয়ান বলবিদ্যার প্রয়োগ ।

  • টপিকস - 4.5:

    ঘুর্ণন বা কৌণিক গতি ।

  • টপিকস - 4.6:

    কেন্দ্রমুখী এবং কেন্দ্রবিমুখী বল ।

  • টপিকস - 4.7:

    জড়তার ভ্রামক, জড়তার ভ্রামক সংক্রান্ত উপপাদ্য এবং চক্রগতির ব্যাসার্ধ ।

  • টপিকস - 4.8:

    কৌণিক গতির গতীয় চলরাশি, কৌণিক ভরবেগ, টর্ক এবং নিউটনের সূত্র ।

টপিকস - 4.1: মৌলিক বল এবং বলের একীভূতকরণ ।

মৌলিক বল


   মৌলিক শব্দের অর্থ বলতে সাধারণত বোঝায় স্বাধীন এবং অনন্য বা নিরপেক্ষ । খুব সাধারণভাবে যদি বলা হয়, মৌলিক বল হচ্ছে মূল বা স্বাধীন বল অর্থ্যাৎ যে সকল বল অন্য কোন বল থেকে উৎপন্ন হয় না বা অন্য কোন বলের রূপ নয় বরং অন্যান্য সকল বল এর থেকে উৎপন্ন হয় কিংবা এসব বলের রূপান্তর মাত্র তাদেরকে মৌলিক বল বলে । প্রকৃতিতে বিদ্যমান চারটি মৌলিক বলকে দুর্বলতার অনুক্রমে সাজালে আমরা পাই-

  1. মহাকর্ষ বল ।
  2. দুর্বল নিউক্লিয় বল ।
  3. তড়িৎ চৌম্বক বল ।
  4. সবল নিউক্লিয় বল ।

মহাকর্ষ বল


   মহাবিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তু পরস্পরকে আকর্ষণ করে তাদের মধ্যকার এ আকর্ষণ বলকে বলা হয় মহাকর্ষ বল । আইজাক নিউটন ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা গ্রন্থে এ বিষয়ে ধারণা প্রদান করেন । তিনিই সর্বপ্রথম মহাকর্ষ বলের গাণিতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন যা নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র নামে পরিচিত । তবে আধুনিক পদার্থবিদ্যায় মহাকর্ষ সবচেয়ে স্পষ্টভাবে আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব দ্বারা বর্ণনা করা হয় । আইনস্টাইনের মতে স্থান-কালের বক্রতার কারণেই মহাকর্ষ বল সৃষ্টি হয় । তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, দুইটি বস্তুর মধ্যে গ্রাভিটন নামক একটি কণার পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমেই এই বল কাজ করে । এই আকর্ষণ বলটি নিউটন শুধু আবিষ্কারই করেননি, সার্থকভাবে প্রয়োগ করেছিলেন সৌরজগতের নিয়ম প্রতিষ্ঠায় । নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রটি হলো: “এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে আকর্ষণ করে, এই আকর্ষণবলের মান বস্তু কণাদ্বয়ের ভরের গুণ ফলের সমানুপাতিক এবং এদের মধ্যবর্তী দুরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক এই বল এদের কেন্দ্রের সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়াকরে” ।

প্রাত্যহিক জীবনে মহাকর্ষ বল খুবই পরিচিত একটি বল কারণ এটি ভরসম্পন্ন যে কোনো বস্তুকে ওজন দান করে যার ফলে বস্তুটি উপর থেকে ফেললে মাটিতে পড়ে । মহাকর্ষের কারণেই পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহগুলি সূর্যের চারিদিকে ঘূর্ণায়মান । মহাকর্ষ বলের দরুণই আমরা ওজন অনুভব করে থাকি। বলাবাহুল্য, প্রকৃতির চারটি মৌলিক বলের মাঝে এই মহাকর্ষ বলই সবচেয়ে দূর্বলতম । উদাহরণসরূপ,কোনো হাইড্রোজেন পরমাণুতে একটি প্রোটন এবং একটি ইলেকট্রনের মধ্যকার মহাকর্ষ বল মাত্র N যেখানে কণা দুটির মাঝে স্থির তড়িৎ বল প্রায় N । তবে এ বলই বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে যদি বস্তু দুটির ভর অনেক বেশি হয় । উদাহরণসরূপঃ সূর্য ও পৃথিবী । তার মানে মহাকর্ষ এমন দুটি বস্তুর মাঝে ক্রিয়া করবে যাদের ভর আছে । এটি দূর্বল হলেও আমাদের কাছে এতো গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ, এই বলের পাল্লা অসীম এবং এই বল সবসময়ই আকর্ষণধর্মী । কিন্তু প্রকৃতির অন্যতিনটি বল কখনো আকর্ষণধর্মী এবং কখনও বিকর্ষণধর্মী হয়ে থাকে । এর ফলে এদের একে অপরকে নাকচ করে দেওয়ার একটি সম্ভাবনা থেকে যায় যেটি মহাকর্ষ বলে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় । আর এ কারণে মহাকর্ষ বল সবচেয়ে কম শক্তিশালী হওয়ার পরও এর প্রভাবই সর্বত্র বিদ্যমান । এখন কথা হচ্ছে মহাকর্ষ বল কিভাবে দুটি বস্তুর মাঝে ক্রিয়াশীল হয় আর এর পাল্লা কেনইবা বেশি ?

কোয়ান্টাম বলবিদ্যার দৃষ্টিতে দুটি পদার্থ কণার অন্তর্বর্তী বল বহন করে গ্রাভিটন নামক একটি ভরহীন, আধানহীন কণা যার স্পিন 2 (যেসকল কণাকে এক অর্ধবৃত্ত মানে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরানো হলে দেখতে আগের মত লাগে । যেমনঃ তাসের কিং বা কুইনের কার্ডটি) । যা আমরা আগেই দেখেছি । আর যেহেতু এই কণার কোনোভর নেই তাই এ কণা যে বল (মহাকর্ষ বল)বহন করবে তার পাল্লা হবে অনেক দীর্ঘ অর্থাৎ সে বেশি দূরত্ব পর্যন্ত বল বিনিময় করতে পারবে । বলা হয়ে থাকে যে সূর্য এবং পৃথিবীরঅন্তর্বর্তী মহাকর্ষীয় বল এই গ্রাভিটন নামক কণার পারষ্পরিক বিনিময় থেকেই সৃষ্ট । এক্ষেত্রে গ্রাভিটনকে মেসেঞ্জার পার্টিকেলও বলা হয়ে থাকে যদিও এটি একটি কল্পিত কণিকা । ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞানীরা যাকে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ বলতেন তাই আসলে গ্রাভিটন । তবে মহাকর্ষীয় তরঙ্গগুলি খুব দূর্বল হওয়ায় কখনোই তাদেরকে সনাক্ত বা পর্যবেক্ষণ করা যায় নি । এই মহাকর্ষ বল দ্বারা কোনো বস্তুর ভূমিতে পতন থেকে শুরু করে উচ্চ পাল্লার ক্ষেত্রে কৃষ্ণগহ্বর এমনকি গ্যালাক্সির গঠন পর্যন্ত ব্যাখ্যা করা যায় । মহাকর্ষ বলকেই প্রথম গাণিতিকভাবে ব্যাখ্যা করা গিয়েছে । নিউটন মধ্যাকর্ষণের সার্বজনীন নিয়মটি উদঘাটন করলেও এর উৎস বা কারণ জানাতে পারেন নি । তার ধারণা ছিল যে, ‘স্থান’ ও ‘কাল’ এর ধর্ম চির শাশ্বত-জড় ও শক্তির উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে এদের ধর্ম প্রভাবিত হয় না । তার ধারণা ছিল মহাকর্ষ হলো পদার্থের (জড়ের) ধর্ম, কোনভাবেই স্থান ও কালের সাথে সংশ্লিষ্ট না । পরে আইনস্টাইন সাধারণ তত্ত্বের সাহায্যে বুঝিয়ে দিলেন যে, জিনিসটা আসলে জড়ের কোন অন্তস্থ ধর্ম নয় । মহাকর্ষ বস্তুত অন্যান্য বলের মত কোন বল নয় । এটি জড়ের উপস্থিতির কারণে ঘটা স্থান কালের বক্রতার ফসল মাত্র । এজন্য এরিস্টটল থেকে শুরু করে গ্যালিলিও, নিউটন মহাকর্ষ বলকে ব্যাখ্যা করে গেলেও এ সংক্রান্ত আমাদের বর্তমান ধারণার ভিত হচ্ছে আইন্সটাইনের আপেক্ষিকতার নীতি ।

তড়িৎচৌম্বক বল


   দুইটি আহিত বা চার্জিত বস্তুর মধ্যে কিংবা দুইটি চৌম্বক পদার্থের মধ্যে এক ধরণের আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল কাজ করে যাকে বলা হয় তড়িৎ চুম্বকীয় বল । এদিকে এই বলের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে একটি পরমাণু বা একটি অণু স্থিতিশীলতা পায় । রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য দায়ী এই বল । কুলম্ব, ফ্যারাডে, আম্পিয়র প্রমূখ বিজ্ঞানী ও তত্ত্বীয় পদার্থবিদদের কাজের মধ্য দিয়ে তাড়িত চৌম্বক বলের প্রকৃতি উদ্ঘাটিত হয় । ম্যাক্সওয়েল এই বলের প্রকৃতির যথার্থ স্বরূপ গাণিতিক মডেলের ওপর স্থাপন করে এর পরিপূর্ণতা প্রদান করেন । ম্যাক্সওয়েলই সর্বপ্রথম বিদ্যুৎ, চুম্বক ও আলোক শক্তিকে একটি একক সত্ত্বা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন । অর্থাৎ তড়িৎ ও চুম্বক দুইটি ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলেও এদেরকে এক সাথে আলোচনা করা হয়, কারণ এদের একটি হতে অন্যটি উৎপন্ন হতে পারে । তড়িৎ আধান বা চার্জ গতিশীল হলে তারা চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি করে । আবার পরিবর্তনশীল চৌম্বকক্ষেত্র তড়িৎ ক্ষেত্র তৈরি করে । এই বলের কার্যকর সীমা অসীম, বলের বাহক হলো শূন্য-স্থিরভর বিশিষ্টফোটন কণিকা । তাড়িত চৌম্বক বল প্রভাবিত বিক্রিয়া প্যারিটি প্রতিসাম্য মেনেচলে । তড়িত-চুম্বকীয় বলের ক্ষেত্রে মেসেঞ্জার পার্টিকেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করে ফোটন নামক ভরহীন,স্পিন ১(যাদেরকে ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরালে দেখতেআগের মত লাগবে । যেমনঃ তাসের একটি টেক্কা) বিশিষ্ট কল্পিত এক কণা । আর ভরহীন কণারদ্বারা এ বল বাহিত হওয়ার কারণে এর পাল্লাও অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত ।

দুর্বল নিউক্লিয় বল


   আমারা জানি প্রকৃতিতে কিছু মৌলিক কণিকা আছে (পারমাণবিক ভর 82 এর চেয়ে বেশি) যাদের নিউক্লিয়াস স্বতস্ফূর্তভাবে ভেঙ্গে যায় । যা তেজস্ক্রিয়তা নামে পরিচিত এবং এ সকল নিউক্লিয়াসদেরকে বলা হয় তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস । ভাঙ্গনের সময় এ সকল নিউক্লিয়াস কিছু রশ্মি বিকিরণ করে যারা তেজস্ক্রিয় রশ্মি নামে পরিচিত । ১৮৯৯ সালে রাদারফোর্ড এবং ভিলার্ড বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে বলেন যে, এরা হল ধনাত্বক চার্জ বিশিষ্ট আলফা, ঋনাত্বকচার্জ বিশিষ্ট বিটা এবং চার্জহীন গামা । তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে যখন বিটা কণা নির্গত হয় তখন কিছু পরিমাণ শক্তিও নির্গত হয় যা কিনা বিটা কণার কণার গতিশক্তি অপেক্ষা সামান্য বেশি । এখন প্রশ্ন আসে যদি বিটা কণা এ শক্তির সামান্য অংশ বহন করে থাকে তবে বাকি শক্তির উৎস কি ? ১৯৩০ সালে ডব্লিউ পাউলি প্রস্তাব করেন যে অবশিষ্ট শক্তি বহন করে আরেক ধরণের কণিকা যা কিনাবিটা কণার সাথেই নির্গত হয় । এই কণাকে বলা হয় নিউট্রিনো । এই বিটা কণা এবং নিউট্রিনো কণার ফলেই সৃষ্টি হয় দূর্বল নিউক্লীয় বলের । একটা উদাহরণ দেখা যাক,

একটি সিজিয়াম পরমাণুতে মোট নিউক্লীয়ন সংখ্যা ১৩৭ । অর্থাৎ এতে প্রোটন ও নিউট্রনের মোট সংখ্যা ১৩৭ । সিজিয়ামে মোট প্রোটন সংখ্যা হল ৫৫টি । এখন যদি “কোনোভাবে” একটি নিউট্রন একটি প্রোটনে পরিণত হতে পারে তবে মোট নিউক্লীয়ন সংখ্যার কোনো পরবর্তন না হলেও যেহেতু একটি প্রোটন বেড়ে গিয়ে ৫৬টি হয়ে যাচ্ছে ফলে পরমাণুটি আর সিজিয়াম পরমাণু থাকবে না । তখন এটি হয়ে যাবে ৫৬ পারমাণবিক সংখ্যা বিশিষ্ট বেরিয়াম পরমাণু । আর এই জন্য যাকে দায়ী করা হয় তার নামই দূর্বল নিউক্লীয় বল । এই পরিবর্তন বা ভাঙ্গনের সময় একটি ইলেকট্রনের পাশাপাশি একটি ইলেকট্রন এন্টি-নিউট্রিনো নির্গত হবে । তবে মজার ব্যাপার হল এই দূর্বল বলকে বুঝতে বেশ সময় লাগে বিজ্ঞানীদের ।

সবল নিউক্লিয় বল


   আমরা জানি, একটি পরমাণু কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস চার্জধারী কনিকা প্রোটন ও চার্জ নিরপেক্ষ কণিকা নিউট্রনের সমন্বয়ে গঠিত । নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে প্রোটন ও নিউট্রন সমূহকে যে বল ধরে রেখে নিউক্লিয়াস টিকে স্থিতিশীলতা দান করে সেই প্রকৃতির বলই সবল নিউক্লিয় বল নামে অভিহিত । এটি প্রকৃতির মধ্যে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী এবং চার্জ অনপেক্ষ । অর্থ্যাৎ প্রোটন প্রোটনের মধ্যে, নিউট্রন নিউট্রনের মধ্যে আবার প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে সমভাবে ক্রিয়াশীল । এটির কার্যকারিতা অতি স্বল্প দূরত্ব প্রসারী মাত্র ফার্মি(10-15) সীমার দূরত্বের মধ্যে ।

এটি মূলত আকর্ষণ ধর্মী হলেও একটি বিশেষ দূরত্বের কমে বিকর্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে । এর প্রয়োজন দেখা দেয় নিউক্লিয়াসের স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে ।

এখন একটি হিলিয়াম পরমাণুর কথা ধরা যাক। এর নিউক্লিয়াসে দু’টি প্রোটন ও দুইটি নিউট্রন রয়েছে । এছাড়া নিউক্লিয়াসের বাইরে কক্ষপথে দুটি ইলেকট্রন ঘূর্ণায়মান রয়েছে । আমরা তাড়িত-চৌম্বক বলের ভিতর কুলম্বের সূত্র থেকে জেনে এসেছি যে, সমধর্মী চার্জ পরষ্পরকে বিকর্ষণ করবে এবং বিপরীতধর্মী পরষ্পরকে আকর্ষণ করবে । কিন্তু একটু খেয়াল করে দেখলে হিলিয়াম নিউক্লিয়াসে কিন্তু দু’টি প্রোটন বসে আছে যারা কিনা একই চার্জযুক্ত এবং বাহিরের কক্ষপথের ইলেকট্রন গুলোও এই ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট প্রোটন গুলোকে আকর্ষণ করছে । তারপরও তারা পরষ্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে না, বিকর্ষণ করছে না । অর্থাৎ এখানে কুলম্ব বল থেকেও একটি শক্তিশালী বল খুব অল্প দূরত্বে ক্রিয়া করছে । যা কিনা সমধর্মী প্রোটন দু’টিকে একই সাথে থাকতে অনুমতি দিচ্ছে । এখানেই সবল নিউক্লীয় বল কাজ করছে যা কিনা এ চারটি মৌলিক বলের মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালী । নিউক্লীয়ন(প্রোটন ও নিউট্রন) সমূহের মাঝে মেসন নামক স্পিন ১ বিশিষ্ট একটি কণিকার আদান-প্রদানের ফলে এ বলের সৃষ্টি বলে ধারণা করা হয় । যতক্ষন পর্যন্ত এই মেসন আদান-প্রদান চলবে ততক্ষন পর্যন্ত নিউক্লীয়ন সমূহ একে-অপরকে ধরে রাখতে পারবে । তবে এই মেসন আদন-প্রদান হওয়ার জন্য নিউক্লীয়ন গুলোকে খুব কাছাকাছি থাকতে হবে কারণ আমরা আগেই জেনেছি সবল নিউক্লিয় বল খুব অল্প দূরত্বের জন্য ক্রিয়া করে । আর এ দূরত্ব একটি মিটার যা একটি নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধের সমান । কেবলমাত্র এই দূরত্বে থাকলেই নিউক্লীয়ন সমূহ সবল নিউক্লীয় বলের প্রভাবে একে অপরেরসাথে আটকে থাকবে। কিন্তু যদি দূরত্ব এর চেয়ে বেশি হয় তবে সবল নিউক্লীয় বল আর ক্রিয়া করবে না । তখন তাড়িত-চৌম্বক বলের জয় হবে এবং এর প্রভাবে নিউক্লীয়ন সমূহেরমাঝে বিকর্ষণ ঘটবে ।

বলের একীভূতকরণ


   ম্যাক্সওয়েল অনেক আগেই বৈদ্যুতিক এবং চুম্ব্বকীয় বলকে একসাথে করলেও তার প্রায় ১০০ বছর পর ১৯৬১ সালে শেলডন গ্ল্যাশো তড়িত-চুম্বকীয় এবং দূর্বল নিউক্লীয় বলকে একীভূত করার জন্য একটি তত্ত্ব উপস্থাপন করেন । তবে এটি ছিল অসম্পূর্ণ।  পরবর্তীতে সালাম এবং ওয়েইনবার্গ নামক দু’জন বিজ্ঞানী এ তত্ত্বের পূর্ণতা প্রদান করেন যা কিনা “Electroweak Interaction” বা “তাড়িত-চুম্বকীয় মিথস্ক্রিয়া” নামে পরিচিতি লাভ করে ।

মৌলিক বলগুলোর শক্তিমাত্রা


   সবল নিউক্লিয় বলের শক্তিমাত্রাকে যদি 1 ধরা হয় তবে আপেক্ষিক শক্তিমাত্রার মাপে বলগুলোকে ওপর থেকে নিচে এভাবে সাজানো যায়-

এই টপিকসের উপর গাণিতিক সমস্যা ।

১। মৌলিক বলগুলোর মধ্যে কোন বলটি সবচেয়ে দূর্বল বল ?
  (ক) মহাকর্ষ বল   (খ) তড়িৎ চৌম্বকীয় বল  (গ) সবল নিউক্লিয় বল   (ঘ) দূর্বল নিউক্লিয় বল

২। তড়িৎ চৌম্বকীয় বল কে আবিষ্কার করেন ?
  (ক) নিউটন   (খ) ম্যাক্সওয়েল   (গ) ফ্যারাডে   (ঘ) ওহম

সমাধান

১।ক   ২।গ 

টপিকস - 4.2: ভরবেগ এবং ঘাত বল ।

ভরবেগ


বস্তুর ভর এবং বেগের গুণফলকে বলা হয় ভরবেগ । একটি বস্তু গতিশীল থাকলে তাকে থামাতে অথবা স্থির থাকলে তাকে গতিশীল করতে কি পরিমাণ বলের প্রয়োজন তা বস্তুটির ভর এবং বেগের উপর নিরভর করে । তাই বল আলচনায় বস্তুর ভরবেগ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাশি । অর্থাৎ m ভরের বস্তু v বেগে গতিশীল এবং তার ভরবেগ P হলে–
   \(p=mv\)
   এককঃ \(p=mv=kg.ms^{-1}\)
   মাত্রাঃ \(p=mv=MLT^{-1}\)

ঘাত বল


ক্রিকেট খেলায় বলকে ব্যাট দিয়ে আঘাত করা, হাতুড়ি দিয়ে পেরেক মারা, বৈদ্যুতিক সুইচ চাপা প্রভৃতি ক্ষেত্রে দেখা যায়, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই বস্তুর উপর বৃহৎ একটি বল প্রযুক্ত হয় । এ ধরণের বলকে বলা হয় ঘাত বল । এক্ষেত্রে বলের ক্রিয়া কাল খুব সামান্য হওয়ায় সময় এবং সরণ সঠিক ভাবে পরিমাপ করা যায় না । বস্তুত তার প্রয়োজন ও হয় না । এক্ষেত্রে ভর বেগের পরিবর্তন থেকে বলের ঘাত নিলেই বল ক্রিয়ার ফলাফল জানা যায় ।

এই টপিকসের উপর গাণিতিক সমস্যা ।

১। কোনটি ভরবেগ বুঝায় ?
  (ক) \(\frac{2m}E\)    (খ) \(\sqrt{2mE}\)   (গ) \(2mE\)   (ঘ) \(\sqrt{\frac{2m}E}\)

২। যে বস্তুর ভরবেগ বেশি, তার কি বেশি ?
  (ক) ভর   (খ) বেগ   (গ) জড়তা   (ঘ) গতিশক্তি

সমাধান

১।খ  ২।গ 

টপিকস - 4.3: নিউটনের সূত্র, বল, জড়তা, বলের ঘাত এবং সংঘর্ষ ।

নিউটনের সূত্র


আইজাক নিউটনের গতিসূত্র গুলো হল প্রকৃতির তিনটি নিয়ম, যা চিরায়ত বলবিদ্যার ভিত্তি স্বরূপ । এই নিয়ম গুলো বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং তার দরূন সৃষ্ট গতির মধ্যে সম্পর্ক বর্ণনা করে । প্রায় তিন শতাব্দির বেশি সময় ধরে এই নিয়মগুলো নানাভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে । সূত্র তিনটি হল:

নিউটনের প্রথম সূত্র


বহিস্থ কোন বল ক্রিয়া না করলে স্থির বস্তু স্থির এবং গতিশীল বস্তু সুষম গতিতে সরল পথে চলতে থাকবে ।

অর্থাৎ F=0 হলে, v=u হবে

অথবা কোন বস্তুর উপর নিট বলের পরিমাণ শূন্য হলে, বস্তুর ভরকেন্দ্র হয় স্থির নয়তো সমবেগে গতিশীল থাকবে । প্রথম সূত্র থেকে আমরা দুটি বিষয় জানতে পারি পদার্থের জড়তা এবং বলের সংজ্ঞা।

পদার্থের জড়তাঃ পদার্থের যে ধর্মের জন্য কোনো স্থির বস্তু বা গতিশীল বস্তু যে অবস্থায় আছে সেই সেই অবস্থায় বজায় রাখার চেষ্টা করে, সেই ধর্মকে জড়তা বলে ।

পদার্থের জাড়তা ধর্ম দুই প্রকার –

  1. স্থিতি জড়তা ।
  2. গতি জড়তা ।

স্থিতি জড়তাঃ স্থির বস্তুর চিরকাল স্থির থাকার প্রবণতাকে স্থিতিজড়তা বলে ।

গতি জড়তাঃ গতিশীল বস্তুর সমগতিতে সরলরেখা বরাবর গতিশীল অবস্থা বজায় রাখার প্রবণতাকে গতি জড়তা বলে।

বলঃ বাইরে থেকে যা প্রয়োগ করে বস্তুর স্থির অবস্থার বা সমগতিতে সরলরেখায় গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন করা হয় বা করার চেষ্টা করা হয় তাকে বল বলে ।

নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র


বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকেই ঘটে ।

অর্থাৎ m ভরের একটি বস্তুতে F বল প্রয়োগে আদি ভরবেগ=mu  এবং শেষ ভরবেগ=mv  হলে,

   ভরবেগের পরিবর্তন \(=mv-mu\)

   ভরবেগের পরিবর্তনের হার \(=\frac{mv-mu}t\)

এখন প্রথম সূত্রানুসারে, \(F\propto\frac{mv-mu}t\)

বা, \(F=k.\frac{mv-mu}t\)    [একক বলের সংজ্ঞা থেকে k ধ্রবকের মান 1 দেখানো যায়]

   \(F=\frac{mv-mu}t\)

বা, \(F=m\frac{v-u}t\)  [যেহেতু, ]

   \(F=ma\)

সুতরাং \(F=\frac{mv-mu}t=ma\)

বলের ঘাত


বস্তুর উপর বল প্রযুক্ত হতে নিশ্চই একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যাপিই বলটি প্রযুক্ত হয় । এই ক্রিয়ারত বল এবং সময়ের গুণফলকে বলা হয় বলের ঘাত ।

অর্থাৎ, বলের ঘাত (J) = বল (F) \(\times\) সময় (t)

বা, \(J=F\times t=\frac{mv-mu}t\times t=mv-mu\) = ভরবেগের পরিবর্তন

বলের ঘাত, \(J=F\times t=mv-mu\)

নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র হতে প্রথম সুত্র


দ্বিতীয় সূত্র হতে আমরা পাই,
   \(F=\frac{mv-mu}t\)

প্রথম সূত্রানুসারে বাহ্যিক কোন বল ক্রিয়া না করলে, অর্থাৎ F=0 হলে,
\(0=\frac{mv-mu}t\)

বা, \(m\times\frac{v-u}t=0\)

বা, \(\frac{v-u}t=0\)   [বস্তুর ভর শুন্য হতে পারে না]

বা, \(v-u=0\)

সুতরাং \(v=u\)
যা নিউটনের প্রথম সূত্র

নিউটনের তৃতীয় সূত্র


প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে ৷ সূত্রটি মূলত, প্রত্যেক ক্রিয়া বলের একটি প্রতিক্রিয়া মূলক বল রয়েছে । তাহলে তুমি যদি কোন একটি বস্তুকে F1 বলে ধাক্কা দাও তবে বস্তুটিও তোমাকে F2 বলে ধাক্কা দেবে । অর্থাৎ, F1 = -F2 ঋণাত্মক চিহ্ন দ্বারা বুঝায়, বলদ্বয় পরস্পর বিপরীত মুখী ।

মনে কর, m1 এবং m2 ভরের দুইটি গাড়ি যথাক্রমে u1 এবং u2 বেগে একই দিকে যাচ্ছিল । পিছনের গাড়িটির বেগ বেশি হলে কোন এক সময় এদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটবে । ধরি, সংঘর্ষ ঘটার ফলে m1 ভরের গাড়িটি v1 বেগে এবং m2 ভরের গাড়িটি v2 বেগে চলতে শুরু করল । 

মনে কর, এতে m1 ভরের গাড়িটি m2 ভরের গাড়িটিকে F1 বলে ধাক্কা দেয় । তাহলে, আমরা বলতে পারি m2 ভরের গাড়িটিও m1 ভরের গাড়িটিকে F2 বলে ধাক্কা দেবে । 

এখন নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুসারে,
   \(F_1=-F_2\)

   বা, \(\frac{m_1v_1-m_1u_1}t=\frac{m_2v_2-m_2u_2}t\)      [উভয়ের জন্য সময় একই]

   বা, \(m_1v_1-m_1u_1=m_2v_2-m_2u_2\)

   বা, \(m_1u_1+m_2u_2=m_1v_1+m_2v_2\)

সুতরাং \(m_1u_1+m_2u_2=m_1v_1+m_2v_2\)

উপরোক্ত সূত্রটিতে দেখা যাচ্ছে, সংঘর্ষের পূর্বে গাড়ি দুইটির ভরবেগের সমষ্টি এবং সংঘর্ষের পরে গাড়ি দুইটির ভর বেগের সমষ্টি সমান । সে জন্য এই সূত্রটিকে ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র বলা হয় ।

Note: সংঘর্ষ দুই বা ততোধিক বস্তুর মধ্যেও ঘটতে পারে । সেক্ষেত্রেও সবগুলো বস্তুর, 
  সংঘর্ষের পূর্বে মোট ভরবেগ = সংঘর্ষের পরে তাদের মোট ভরবেগ

এই নীতি প্রয়োগ করে এ সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যাই সমাধান করা যাবে । যেমন- 

১। সংঘর্ষের পর মিলিত হলে

\(m_1\) এবং \(m_2\) ভরের দুইটি বস্তু যদি \(u_1\) এবং \(u_2\) বেগে গতিশীল থাকে এবং তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটার পর এমন হয় যেন তারা সংঘর্ষের পর মিলিত হয়ে v বেগে চলতে শুরু করল তবে,

   সংঘর্ষের পূর্বে তাদের মোট ভরবেগ \(=m_1u_1+m_2u_2\)
   সংঘর্ষের পরে তাদের মোট ভরবেগ \(=(m_1+m_2)v\)

যেহেতু, সংঘর্ষের পূর্বে মোট ভরবেগ = সংঘর্ষের পরে তাদের মোট ভরবেগ

সুতরাং \(m_1u_1+m_2u_2=(m_1+m_2)v\)

২। সংঘর্ষের আগে মিলিত থাকলে

m ভরের একটি বস্তু যদি u বেগে গতিশীল থাকে এবং হঠাৎ সংঘর্ষ ঘটার পর এমন হয় যেন বস্তুটি \(m_1\) এবং \(m_2\) ভরের দুইটি খন্ডে বিভক্ত হয়ে গেল ।  বিভক্ত হওয়ার পর খন্ড দুইটি যথাক্রমে \(v_1\) এবং \(v_2\) বেগে চলতে শুরু করল তবে,

   সংঘর্ষের পূর্বে তাদের মোট ভরবেগ \(=mu\)
   সংঘর্ষের পরে তাদের মোট ভরবেগ \(=m_1v_1+m_2v_2\)

যেহেতু, সংঘর্ষের পূর্বে মোট ভরবেগ = সংঘর্ষের পরে তাদের মোট ভরবেগ

সুতরাং \(mu=m_1v_1+m_2v_2\)

৩। বন্দুক এবং গুলি

বন্দুক হতে গুলি নিক্ষেপের ক্ষেত্রে, M ভরের বন্দুক হতে m ভরের গুলি v বেগে ছোড়া হলে বন্দুকটি V বেগে পিছন দিকে একটি বেগ লাভ করে যার জন্য সৈনিক পিছন দিকে ধাক্কা অনুভব করে । এক্ষেত্রে,

   গুলি ছোড়া বা সংঘর্ষের পূর্বে মোট ভরবেগ \(=0\)
   গুলি ছোড়া বা সংঘর্ষের পরে মোট ভরবেগ \(=MV+mv\)

যেহেতু, সংঘর্ষের পূর্বে মোট ভরবেগ = সংঘর্ষের পরে তাদের মোট ভরবেগ

সুতরাং, \(MV+mv=0\)

৪। ততোধিক বস্তুর মধ্যে সংঘর্ষে

ততোধিক বস্তুর মধ্যে সংঘর্ষের ক্ষেত্রে,

   \(m_1u_1+m_2u_2+m_3u_3\;…….+m_nu_n=m_1v_1+m_2v_2+m_3v_3\;…….+m_nv_n\)

তবে এক্ষেত্রে সবগুলো বেগের দিক একই দিকে হতে হবে । না থাকলে করে নিতে হবে ।

৫। দ্বিমাত্রিক সংঘর্ষের ক্ষেত্রে

মনে কর, m1 এবং m2 ভরের দুইটি বস্তু যথাক্রমে u1 এবং u2 বেগে গতিশীল থাকা অবস্থায় এদের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে m1 ভরের বস্তুটি X অক্ষের সাথে α কোণে v1 বেগে এবং m2 ভরের বস্তুটি X অক্ষের সাথে β কোণে v2 বেগে চলতে শুরু করল । 

তাহলে,
   \(m_1u_1+m_2u_2=m_1v_1+m_2v_2\)

সূত্রটি উভয় অক্ষে প্রয়োগ করি- 

X-অক্ষে-
   \(u_1=u_1\)
   \(u_2=u_2\)
   \(v_1=v_1\cos\alpha\)
   \(v_2=v_2\cos\beta\)

সুতরাং, \(m_1u_1+m_2u_2=m_1v_1\cos\alpha+m_2v_2\cos\beta\)

Y-অক্ষে-
   \(u_1=u_1\cos90^o=0\)
   \(u_2=u_2\cos90^o=0\)
   \(v_1=v_1\sin\alpha\)  [উপাংশ সূত্র]
   \(v_2=-v_2\sin\beta\)  [যেহেতু, \(v_2\sin\beta\) এর দিক নিচের দিকে] 

তাহলে, \(0=m_1v_1\sin\alpha-m_2v_2\sin\beta\)

সুতরাং, \(m_1v_1\sin\alpha-m_2v_2\sin\beta=0\)

এখানে থেকে যেকোনো দুইটি রাশির মান বের করতে হতে পারে ।

৬। স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ

যে সংঘর্ষের ক্ষেত্রে বস্তুব্দয়ের সংঘর্ষ ঘটার পূর্বের এবং পরের মোট গতিশক্তি সমান হয় অর্থাৎ গতিশক্তি সংরক্ষিত থাকে তাকে স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ বলে । এক্ষেত্রে বস্তুর গতিশক্তি সংরক্ষিত না থাকলে সে সংঘর্ষকে বলা হয় অস্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ । কিন্তু বাস্তবিক ভাবে যে সকল সংঘর্ষ ঘটে থাকে সেগুলোর ক্ষেত্রে বস্তুদ্বয়ের গতিশক্তির কিছু অংশ তাপ ও শব্দ শক্তিতে রুপান্তরিত হয় বিধায় কোন সংঘর্ষই স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ নয় বরং অস্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ। তাই স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ একটি শুধুই তাত্ত্বিক সংঘর্ষ।

তাহলে স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষের সংজ্ঞা অনুসারে,
   \(\frac12m_1u_1^2+\frac12m_2u_2^2=\frac12m_1v_1^2+\frac12m_2v_2^2\) ————-(1)

আমরা জানি, যেকোনো সংঘর্ষের ক্ষেত্রে,
   \(m_1u_1+m_2u_2=m_1v_1+m_2v_2\)
  বা, \(m_1u_1-m_1v_1=m_2v_2-m_2u_2\)
  বা, \(m_1(u_1-v_1)=m_2(v_2-u_2)\) ————-(2)

সমীকরণ (1) হতে পাই,
   \(\frac12m_1u_1^2+\frac12m_2u_2^2=\frac12m_1v_1^2+\frac12m_2v_2^2\)
  বা, \(\frac12m_1u_1^2-\frac12m_1v_1^2=\frac12m_2v_2^2-\frac12m_2u_2^2\)
  বা, \(m_1(u_1^2-v_1^2)=m_2(v_2^2-u_2^2)\)
  বা, \(m_1\left(u_1+v_1\right)\left(u_1-v_1\right)=m_2\left(v_2+u_2\right)\left(v_2-u_2\right)\) ————-(3)

সমীকরণ (3) ÷ (2) হতে পাই,
  \(u_1+v_1=v_2+u_2\)
  বা, \(v_2=u_1+v_1-u_2\) ————-(4)
  বা, \(v_1=v_2+u_2-u_1\) ————-(5)

সমীকরণ (2) ও (4) হতে,
   \(m_1\left(u_1-v_1\right)=m_2\left(u_1+v_1-u_2-u_2\right)\)
  বা, \(m_1u_1-m_1v_1=m_2u_1+m_2v_1-2m_2u_2\)
  বা, \(m_1u_1-m_2u_1+2m_2u_2=m_1v_1+m_2v_1\)
  বা, \(v_1\left(m_1+m_2\right)=u_1\left(m_1-m_2\right)+2m_2u_2\)
সুতরাং, \(v_1=\frac{m_1-m_2}{m_1+m_2}u_1+\frac{2m_2}{m_1+m_2}u_2\)

সমীকরণ (2) ও (5) হতে,
   \(m_1\left(u_1-v_2-u_2+u_1\right)=m_2\left(v_2-u_2\right)\)
  বা, \(2m_1u_1-m_1v_2-m_1u_2=m_2v_2-m_2u_2\)
  বা, \(2m_1u_1-m_1u_2+m_2u_2=m_1v_2+m_2v_2\)
  বা, \(v_2\left(m_1+m_2\right)=u_2\left(m_2-m_1\right)+2m_1u_1\)
সুতরাং, \(v_2=\frac{m_2-m_1}{m_1+m_2}u_2+\frac{2m_1}{m_1+m_2}u_1\)

তাহলে,
  \(v_1=\frac{m_1-m_2}{m_1+m_2}u_1+\frac{2m_2}{m_1+m_2}u_2\)
  \(v_2=\frac{m_2-m_1}{m_1+m_2}u_2+\frac{2m_1}{m_1+m_2}u_1\)

সূত্রদ্বয়ের বিশেষত্ব


ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্রটিতে যেকোনো একটি বস্তুর সংঘর্ষের পরের বেগ দেয়া থাকলে অন্যটির সংঘর্ষের পরবর্তী বেগ জানা যায় । কিন্তু এই সূত্রদ্বয়ে সংঘর্ষের পরের প্রত্যেকটি বস্তুর বেগ আলাদা আলাদা ভাবে নির্ণয় করা যায়, অন্যটির সাহায্য ছাড়াই ।

  • বিশেষ ক্ষেত্র

যদি সংঘর্ষের বস্তুদ্বয়ের ভর সমান হয় । অর্থাৎ \(m_1=m_2\) হয়, তবে উপরোক্ত সূত্রদ্বয় হতে পাই,

    • \(v_1=u_2\)
    • \(v_2=u_1\)

এখানে, প্রথম বস্তুটি নেবে দ্বিতীয় বস্তুটির বেগ এবং দ্বিতীয় বস্তুটি নেবে প্রথম বস্তুটির বেগ । অর্থাৎ, সংঘর্ষের পর এরা বেগ বিনিময় করবে । 

এই টপিকসের উপর গাণিতিক সমস্যা ।

১। 2kg ভরের একটি বন্দুক হতে 200g ভরের গুলি 400ms-1 বেগে বেড়িয়ে গেল । বন্দুকের পশ্চাৎ বেগ নির্ণয় কর ।

২। 30kg ভরের একটি পাথর খন্ড 120ms-1 বেগে গড়িয়ে চলার সময় দুই টুকড়ায় বিভক্ত হয়ে যায় । এদের মধ্যে 12kg ভরের খণ্ডটি স্থির হয়ে যায় । অপর খন্ডটি কত বেগে গতিশীল হবে ।

৩। 5 টন ভরের একটি ট্রাক উত্তর দিকে 40kmh-1 বেগে যাচ্ছিল । একইদিকে গতিশীল 5 টন ভরের আর একটি ট্রাক সেই ট্রাকটির পিছু পিছু 45kmh-1 বেগে যাচ্ছিল । হঠাৎ তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটল । যদি এই সংঘর্ষটি স্থিতিস্থাপন হয় তবে, সংঘর্ষের পর ট্রাক দুইটির বেগ নির্ণয় কর ।

সমাধান

১। 2kg ভরের একটি বন্দুক হতে 200g ভরের গুলি 400ms-1 বেগে বেড়িয়ে গেল । বন্দুকের পশ্চাৎ বেগ নির্ণয় কর ।

সমাধান
বন্দুক এবং গুলির জন্য,
   \(MV+mv=0\)
   \(2\times V+0.2\times 400=0\)
   \(V=-40\)

বন্দুকের পশ্চাৎ বেগ 40ms-1

 

২। 30kg ভরের একটি পাথর খন্ড 120ms-1 বেগে গড়িয়ে চলার সময় দুই টুকড়ায় বিভক্ত হয়ে যায় । এদের মধ্যে 12kg ভরের খণ্ডটি স্থির হয়ে যায় । অপর খন্ডটি কত বেগে গতিশীল হবে ।

সমাধান
সংঘর্ষের আগে মিলিত থাকার ক্ষেত্রে,
   \(mu=m_1v_1+m_2v_2\)
   \(30\times 120=12\times 0+\left(30-12\right)\times v_2\)
   \(v_2=200\)

সুতরাং 18kg ভরের অপর খণ্ডটি 200ms-1 বেগে একইদিকে গতিশীল হবে ।

 

৩। 5 টন ভরের একটি ট্রাক উত্তর দিকে 40kmh-1 বেগে যাচ্ছিল । একইদিকে গতিশীল 5 টন ভরের আর একটি ট্রাক সেই ট্রাকটির পিছু পিছু 45kmh-1 বেগে যাচ্ছিল । হঠাৎ তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটল । যদি এই সংঘর্ষটি স্থিতিস্থাপন হয় তবে, সংঘর্ষের পর ট্রাক দুইটির বেগ নির্ণয় কর ।

সমাধান
যেহেতু এখানে ট্রাক দুইটির ভর সমান এবং সংঘর্ষটি স্থিতিস্থাপন, তাই ট্রাক দুইটি বেগ বিনিময় করবে।

সুতরাং সংঘর্ষের পর-
প্রথম ট্রাকের বেগ 45kmh-1
দ্বিতীয় ট্রাকের বেগ 40kmh-1

টপিকস - 4.4: বাস্তব জীবনে নিউটনিয়ান বলবিদ্যার প্রয়োগ ।

বাস্তব জীবনে নিউটনিয়ান বলবিদ্যার প্রয়োগ


নিউটনিয়ান বলবিদ্যা ব্যবহার করে বাস্তব জীবনে সংগঠিত অনেক ঘটনা ব্যাখ্যা করা যায় । এখানে কয়েকটি ঘটনা আমরা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব ।

১। রকেট উড্ডয়ন


গ্যাসের ভর অনেক কম । কিন্তু যদি এর বেগ অনেক বেশি হয় তবে নিশ্চই এর ভরবেগ অনেক বেশি হবে । সাধারণত রকেট উড্ডয়নের ক্ষেত্রে, রকেটের নিম্নাংশে তরল হাইড্রোজেন তরল অক্সিজেনের সাহায্যে পুড়িয়ে উৎপন্ন গ্যাসকে অধিক বেগে বের হতে দেয়া হয় । যা ফলে প্রতিক্রিয়া বলের সূত্রানুসারে রকেটটি উদ্ধমুখি বল লাভ করে ।

ধরে নাও,
   উড্ডয়নের মুহূর্তে রকেটের মধ্যে জ্বালানীর পরিমাণ ছিল \(=m_1\)
   \(\triangle t\) সময় উড্ডয়নের পর জ্বালানীর অবশিষ্ট পরিমাণ ছিল \(=m_2\)
   নির্গত গ্যাসের বেগ \(=v\)
   রকেটের ভর \(=M\)
   রকেটের ত্বরণ \(=a\)

সুতরাং \(\triangle t\) সময়ে রকেটের ভরবেগের পরিবর্তন \(=m_1v-m_2v=\triangle mv\)   [যেহেতু রকেটের ভর পরিবর্তন হয় না]

আমরা জানি,
বলের ঘাত = বল × সময় = ভরবেগের পরিবর্তন

বা, \(F\triangle t=\triangle mv\)

   \(F=\frac{\triangle m}{\triangle t}v\)     [যেখানে \(\frac{\triangle m}{\triangle t}\) হল জ্বালানী ব্যবহারের হার]

  বা, \(Ma=\frac{\triangle m}{\triangle t}v\) 

   \(a=\frac1M\frac{\triangle m}{\triangle t}v\)

তবে প্রক্ষেপণের মুহূর্তে বা প্রকৃত ত্বরণ বলা হলে,

   \(a=\frac1M\frac{\triangle m}{\triangle t}v-g\)

লক্ষ কর, a=g হলে রকেটটি উড্ডয়নে সক্ষম হবে ।

২। লিফটের উদ্ধারোহন বা অবরোহন


মনে কর, তোমার কোন একটি বন্ধুর কাছে তুমি g টাকা ধার নিয়েছিলে । সে তোমার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে টাকা নেয়ার জন্য এবং তুমি বাসার ভিতরে আছো । এখন তুমি যদি a টাকার কোন পণ্য কেনার জন্য বাজারে যেতে চাও । তাহলে তোমাকে কত টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হতে হবে ? নিশ্চই (g+a) টাকা । কারণ তোমাকে আগে তাকে g টাকা দিয়ে মুক্ত হতে হবে তারপর বাকি a টাকা নিয়ে তুমি বাজারে যাবে । আবার যদি এমন হয়, তুমি তোমার বন্ধুর কাছে টাকা পাও এবং সে দরজার পাশে টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাহলে তুমি a টাকার বাজার করতে চাইলে (g-a) টাকা নিয়ে বের হতে হবে । যদি এ বিষয়টি বুঝে থাক তবে লক্ষ কর,

লিফট উপরের দিকে ওঠার ক্ষেত্রে- 

  • একটি লিফট যদি a ত্বরণে উপরে উঠতে চায়, তবে তাকে আগে অভিকর্ষজ ত্বরণ g কে উপেক্ষা করে মুক্ত হতে হবে । তারপর অতিরিক্ত ত্বরণ নিয়ে এটি উপরের দিকে উঠবে । তাহলে যদি লিফটের ভর m হয় এবং এটি a ত্বরণে উপরের দিকে উঠতে চায় তবে লিফট কতৃক প্রযুক্ত বল F হবে,
    \(F=mg+ma\)
    \(F=m(g+a)\)

কার্যকর ত্বরণ, \(a=g+a\)

লিফট নিচের দিকে নামার ক্ষেত্রে- 

  • একটি লিফট যদি a ত্বরণে নিচে নামতে চায়, তবে তাকে অভিকর্ষজ ত্বরণ g সাহায্য করবে । ফলে লিফট কতৃক প্রযুক্ত বলও কম হবে । তাহলে যদি লিফটের ভর m হয় এবং এটি a ত্বরণে নিচে নামতে চায় তবে লিফট কতৃক প্রযুক্ত বল F হবে,
    \(F=mg-ma\)
    \(F=m(g-a)\)

কার্যকর ত্বরণ, \(a=g-a\)

[নিচে নামার ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থে রকেটটি F বলে অভিকর্ষকে বাধা দেয়]

৩। ব্যাঙ্কিং


রাস্তার বাঁক কেমন হয় ? একটি নির্দিষ্ট বক্রতার কেন্দ্র বিশিষ্ট বৃত্তের অংশ । এখন এই বাঁকে যদি তুমি সাইকেলের বেগ না কমিয়ে রাস্তার সাথে লম্বভাবে সাইকেলকে রেখে চালাতে চাও, নিশ্চই তা পারবেনা । ছিটকে পরে যাবে । তুমি বেগ না কমাতে চাইলে সমস্যা নেই । কিন্তু সেক্ষেত্রে সাইকেলটিকে রাস্তার বক্রতার কেন্দ্রের দিকে বাঁকিয়ে নিতে হবে । তবে বেশি হেলে গেলে সাইকেলের চাকা পিছলে কেন্দ্রের বাইরের দিকে চলে যাবে এবং তুমি ঘষা খাবে । চাকা পিছলে যাবার কারণ, এটি বেশি হেলে যাবার ফলে রাস্তা পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘর্ষণ বলের যোগান দিতে পারেনি । পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘর্ষণ বলের যোগান দেবার জন্য আমরা রাস্তাটিকে বক্রতার কেন্দ্রের দিকে কিছুটা ঢালু এবং বাইরের দিকে কিছুটা উঁচু করা যেতে পারে । ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে । রাস্তার এই কেন্দ্রে ঢালু এবং বাইরে উঁচু করার পদ্ধতিকে বলা হয় ব্যাঙ্কিং । 

চিত্রে AB রাস্তাটিকে θ কোণে অপর পাশে BC=h পরিমাণ উঁচু করে AC=x কে রাস্তায় পরিণত করা হয়েছে । যেহেতু রাস্তাটিকে θ কোণে উঁচু করা হয়েছে, সুতরাং সাইকেলটিও (চিত্রে চাকা) উলম্বের সাথে θ কোণে রাস্তার সাথে লম্বভাবে থেকে বাঁক নিতে পারবে । সাইকেলটি যদি রাস্তায় R বলে চাপ দেয় তবে প্রতিক্রিয়া অনুসারে রাস্তাও একে উদ্ধমুখি R বল প্রয়োগ করবে । R বলের উদ্ধমুখি উপাংশ \(R\cos\theta\) সাইকেলের ওজনের বিপরীতে ক্রিয়া করছে । যেহেতু সাইকেলটি ভূপৃষ্ঠে ঢুকে যাচ্ছেনা । তাই এটি সাইকেলের ওজনের সমান হবে ।

আবার \(R\sin\theta\) বা কেন্দ্রমুখী উপাংশ কেন্দ্রমুখী বলের যোগান দিচ্ছে যার অধিক বৃদ্ধি সাইকেলটি সাইকেলটিকে কেন্দ্রের বাইরের দিকে পিছলিয়ে নিয়ে যেতে পারে ।

ধরি,
   রাস্তার বক্রতার ব্যাসার্ধ =r
   সাইকেলের ভর =m
   সাইকেলের বেগ =-v

তাহলে উপরোক্ত আলোচনা অনুসারে আমরা বলতে পারি,
   \(R\cos\theta=mg\) ————(1)
   \(R\sin\theta=\frac{mv^2}r\) ————(2)

সমীকরণ (2)÷(1) হতে পাই,
   \(\frac{R\sin\theta}{R\cos\theta}=\frac{mv^2}r\times\frac1{mg}=\frac{v^2}{rg}\)
   \(\tan\theta=\frac{v^2}{rg}\)

আবার, \(\triangle ABC\) এ \(\sin\theta=\frac hx\)

তবে, θ এর মান খুব কম হলে \(\sin\theta=\tan\theta\) বলা যায় ।

সুতরাং, \(\tan\theta=\frac hx\)     [θ খুব সামান্য হলে]

   \(\tan\theta=\frac hx=\frac{v^2}{rg}\)

নোটঃ এক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, r= রাস্তার বাঁকের ব্যাসার্ধ এবং x= রাস্তার বেধ বা প্রসস্থতা ।

এই টপিকসের উপর গাণিতিক সমস্যা ।

১। জ্বালানী সহ একটি রকেটের ভর 600kg । জ্বালানী ব্যবহারের হার 20kgs-1 । রকেটের গড়বেগ 3500ms-1 হলে, রকেটের প্রকৃত ত্বরণ কত হবে ? [g=9.8ms-2]

২। 60kg ভরের একজন ব্যাক্তি একটি লিফটে করে 5ms-2 ত্বরণে উপরের দিকে উঠে আবার একই ত্বরণে নিচে নামলেন । লিফটের ভিতরে তাকে একটি ওজন মাপা মেশিনের উপর দাঁড়াতে বললে উভয় ক্ষেত্রে তার ভর কত বলে মনে হবে ? [g=10ms-2 ধরে নাও]

৩। 15m বক্রতার ব্যাসার্ধ্যের এবং 4m প্রস্থের একটি রাস্তার ভিতরের পাশের তুলনায় বাইরের পাশ 1.5m উঁচু করা হয়েছে । এই রাস্তায় সর্বোচ্চ কত বেগে গাড়ি চলতে পারবে ?

সমাধান

১। জ্বালানী সহ একটি রকেটের ভর 600kg । জ্বালানী ব্যবহারের হার 20kgs-1 । রকেটের গড়বেগ 3500ms-1 হলে, রকেটের প্রকৃত ত্বরণ কত হবে ? [g=9.8ms-2]

সমাধান
রকেটের প্রকৃত ত্বরণ, \(a=\frac1M\frac{\triangle m}{\triangle t}v-g=\frac1{600}\times20\times3500-9.8=106.87\;ms^{-1}\)

 

২। 60kg ভরের একজন ব্যাক্তি একটি লিফটে করে 5ms-2 ত্বরণে উপরের দিকে উঠে আবার একই ত্বরণে নিচে নামলেন । লিফটের ভিতরে তাকে একটি ওজন মাপা মেশিনের উপর দাঁড়াতে বললে উভয় ক্ষেত্রে তার ভর কত বলে মনে হবে ? [g=10ms-2 ধরে নাও]

সমাধান
উপরের দিকে ওঠার ক্ষেত্রে,
   লিফটে তার অনুভূত ওজন, \(F=m\left(g+a\right)=60\times\left(10+5\right)=900N\)
   অনুভূত ভর, \(m=\frac Fg=\frac{900}{10}=90\;kg\)

নিচের দিকে নামার ক্ষেত্রে,
   লিফটে তার অনুভূত ওজন, \(F=m\left(g-a\right)=60\times\left(10-5\right)=300N\)
   অনুভূত ভর, \(m=\frac Fg=\frac{300}{10}=30\;kg\)

সুতরাং উপরের দিকে ওঠার ক্ষেত্রে তার ভর 90kg এবং নিচের দিকে নামার ক্ষেত্রে তার ভর 30kg মনে হবে ।

 

৩। 15m বক্রতার ব্যাসার্ধ্যের এবং 4m প্রস্থের একটি রাস্তার ভিতরের পাশের তুলনায় বাইরের পাশ 1.5m উঁচু করা হয়েছে । এই রাস্তায় সর্বোচ্চ কত বেগে গাড়ি চলতে পারবে ?

সমাধান
নিরাপদ বাঁক নেওয়ার ক্ষেত্রে,
   \(\frac hx=\frac{v^2}{rg}\)
     \(\frac{1.5}4=\frac{v^2}{15\times9.8}\)
   \(v=7.42\;ms^{-1}\)

সুতরাং এই রাস্তায় সর্বোচ্চ 7.42 ms-1 বেগে গাড়ি চালানো নিরাপদ ।

টপিকস - 4.5: ঘুর্ণন বা কৌণিক গতি ।

ঘূর্ণন বা কৌণিক গতি


তুমি যদি একটি বৃত্তাকার পথে সম্পূর্ণ এক পাক ঘুরে আসো তাহলে তোমার রৈখিক সরণ শুন্য । কারণ তুমি তোমার পূর্বের অবস্থানেই আছো । কিন্তু যদি তুমি দূরত্ব পরিমাপ করতে চাও, কি পাবে ? নিশ্চই বৃত্তাকার পথের পরিধি । অর্থাৎ তুমি পরিধির সমান দূরত্ব অতিক্রম করেছ, যা রৈখিক । কিন্তু যদি কৌণিক সরণ এর কথা বলি, নিশ্চই 360°  । আরও একবার ঘুরে আসলে 720°  । তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, কেউ রৈখিক পথ চললে তার যেমন রৈখিক সরণ থাকে, তেমনি বৃত্তাকার পথে চললে তার রৈখিক দূরত্বের পাশাপাশি কৌণিক সরণও থাকবে ।

একটি বস্তু যদি r ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার পথে A বিন্দু হতে B বিন্দুতে আনা হয় তাহলে তার রৈখিক সরণ বৃত্তচাপ s এর সমান এবং কৌণিক সরণ θ ।

আমরা জানি, এদের মধ্যকার সম্পর্ক-
   \(s=r\theta\) ————–(1)

আর এ পরিমাণ সরণ ঘটানোর জন্য যদি সমবেগে t সময় লেগে থাকে

 তবে বস্তুটির রৈখিক বেগ হবে, \(v=\frac st\) ————–(2)
   রৈখিক ত্বরণ, \(a=\frac vt\) ————–(3)

অনুরূপভাবে, কৌণিক বেগ (ω) হবে, \(\omega=\frac\theta t\) ————–(4)

কৌণিক ত্বরণ (α) হবে, \(\alpha=\frac\omega t\) ————–(5)

সমীকরণ (1) ও (2) হতে, 
   \(s=r\theta\)

   বা, \(\frac st=r\times\frac\theta t\)  [উভয় পক্ষকে t দ্বারা ভাগ করে]

   \(v=\omega r\)  [(2) ও (3) হতে]

বা, \(\frac vt=r\times\frac\omega t\)   [উভয় পক্ষকে t দ্বারা ভাগ করে]

   \(a=\alpha r\) [(3) ও (5) হতে]

আবার, সমীকরণ (4) হতে পাই, \(\omega=\frac\theta t\)

নিক্ষিপ্ত বস্তু যদি উক্ত বৃত্তাকার পথে পুরো এক পাক ঘুরে আসে তাহলে তার কৌণিক সরণ, \(\theta=2\pi\) এবং এতে যে সময় লাগে তাকে বলা হয় পর্যায়কাল, \(t=T\)

অর্থাৎ যখন \(t=T\) তখন \(\theta=2\pi\)

সুতরাং \(\omega=\frac\theta t=\frac{2\pi}T=2\pi f\)  [যেহেতু কম্পাংক, \(f=\frac1T\)]

আবার ঘূর্ণায়মান বস্তু যদি t সেকেন্ডে N সংখ্যকবার ঘোরে তবে, তার পর্যায়কাল হবে, \(t=\frac tN\)

তাহলে, \(\omega=\frac{2\pi}T=\frac{2\pi}{\frac tN}=2\pi\frac Nt\) যেখানে, N = ঘূর্ণন সংখ্যা এবং t = উক্ত ঘূর্ণনের জন্য প্রয়োজনীয় সময়

তাহলে, রৈখিক এবং কৌণিক গতীয় রাশিগুলোর মধ্যে যে সম্পর্কগুলো পাওয়া গেল,
   \(s=r\theta\)
   \(\omega=\frac\theta t=\frac{2\pi}T=2\pi f=2\pi\frac Nt\)
   \(\alpha=\frac\omega t\)
   \(v=\omega r\)
   \(a=\alpha r\)

রৈখিক এবং কৌণিক গতির প্রতিক এবং সুত্রগুলোকে আমরা এভাবে তুলনা করে মনে রাখতে পারি-

ω এবং α  এর একক-মাত্রা


  • এককঃ \(\omega=\frac\theta t=\frac{rad}s=rad.s^{-1}=s^{-1}=Hz=\) কম্পাংক (f) এর একক
  • মাত্রাঃ \(\omega=\frac\theta t=\frac1T=\left[T^{-1}\right]=\) কম্পাংক (f) এর মাত্রা
  • এককঃ \(\alpha=\frac\omega t=\frac{rad.s^{-1}}s=rad.s^{-2}=s^{-2}=\)
  • মাত্রাঃ \(\alpha=\frac\omega t=\frac{T^{-1}}T=\left[T^{-2}\right]\)

কখনো কখনো কৌণিক বেগ ω  এর দুইটি একক পাওয়া যায়


   \(\omega=x\;rps\;=\;2\pi\frac Nt=\;2\pi\frac x1=2\pi x\;rad.s^{-1}\)

   \(\omega=x\;rpm\;=\;2\pi\frac Nt=\;2\pi\frac x{60}\;rad.s^{-1}\)

এই টপিকসের উপর গাণিতিক সমস্যা ।

১। একটি বৈদ্যুতিক ফ্যান 700rmp কৌণিক গতিতে ঘুরছে । এটিকে সুইচ বন্ধ করে 15s এ থামানো হল । থামার পূর্বে ফ্যানটি কতবার ঘুরবে ?

সমাধান

১। একটি বৈদ্যুতিক ফ্যান 700rmp কৌণিক গতিতে ঘুরছে । এটিকে সুইচ বন্ধ করে 15s এ থামানো হল । থামার পূর্বে ফ্যানটি কতবার ঘুরবে ?

সমাধান

ফ্যানের আদি কৌণিক বেগ, \(\omega_0=700\;rmp=700\times\frac{2\pi}{60}=\frac{70\pi}3\;rad\)
ফ্যানের শেষ কৌণিক বেগ, \(\omega=0\;rad\)
প্রয়োজনীয় সময়, \(t=15\;sec\)
কৌণিক সরণ, \(\theta=?\)

আমরা জানি,
   \(\theta=\frac{\omega_0+\omega}2t=\frac{{\displaystyle\frac{70\pi}3}+0}2\times15=175\pi\;rad\)

ঘূর্ণন সংখ্যা \(=\frac{175\pi}{2\pi}=87.5\)
সুতরাং থামার পূর্বে ফ্যানটি 87.5 বার ঘুরবে ।

টপিকস - 4.6: কেন্দ্রমুখী এবং কেন্দ্রবিমুখী বল ।

কেন্দ্রমুখী এবং কেন্দ্রবিমুখী বল


তুমি যদি একটি বস্তুকে সুতায় বেঁধে বৃত্তাকার পথে ঘুরানোর চেষ্টা কর, এটি নিশ্চয়ই ঘুরবে । প্রশ্ন হল কেন ঘুরবে ? বলটি তো ছিটকে চলে যাওয়ার কথা ছিল অথবা সুতার টানে তোমার হাতের কাছেই চলে আসার কথা ছিল । কেন দুইটি ঘটনার কোনটিই ঘটলো না ? বিষয়টির গাণিতিক উত্তর হবে, তুমি যখন বস্তুটিকে ঘুরাও বস্তুটির এই বেগের জন্য বস্তুটি বাইরের দিকে ছিটকে চলে যেতে চায় যার দরুণ যেকোনো মুহূর্তে সুতাটি কেটে দিলে বস্তুটি স্পর্শক বরাবর চলে যায় । এই বলের দিক বৃত্তের কেন্দ্র থেকে বস্তুটির তাৎক্ষণিক অবস্থানরত বিন্দুর দিক বরাবর বৃত্তের বাইরের দিকে । যাকে বলা হয়, কেন্দ্র বিমুখী বল । আর যে সুতায় বেঁধে ঘুরানো হচ্ছে তার টান যাকে বলা হয় কেন্দ্রমুখী বল । এই দুই বল সমান বিধায়, বস্তুটি এর বৃত্তাকার পথের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে বৃত্তাকার পথে ঘুরতে থাকে । অনেকের মনেই হয়ত প্রশ্ন জাগতে পারে, সুতা কেটে দিলে তো বস্তুটি স্পর্শক বরাবর চলে যায় অথবা যেকোনো মুহূর্তে বেগের দিক তো বৃত্তের স্পর্শক বরাবর । তাহলে কেন্দ্রবিমুখী বলের দিক কেন কেন্দ্র থেকে পরিধি বরাবর সোজা বাহিরের দিকে বা স্পর্শকের উপর লম্ব বরাবর ? এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য হলেও চল বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক-

মনে করি, m ভরের বস্তুটি r ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার পথে ω কৌণিক এবং v রৈখিক বেগে আবর্তনশীল । এ আবর্তনের সময় যেকোনো মুহূর্তে বস্তুটি A বিন্দুতে ছিল । এ সময় তার রৈখিক বেগের দিক ঐ বিন্দুতে বৃত্তের স্পর্শক AB বরাবর । এখন যদি বস্তুটি অতিক্ষুদ্র সময়  \(\triangle t\) পর E বিন্দুতে চলে আসে, এ বিন্দুতে তার বেগের দিক ঐ বিন্দুতে স্পর্শক EF বরাবর যাকে বর্ধিত করলে AB কে C বিন্দুতে ছেদ করে । \(\triangle t\) সময়ে A হতে E বিন্দুতে আসায় বস্তুটির কৌণিক সরণ \(\triangle\theta\) । এখন, A এবং E উভয় বিন্দুতে বস্তুটির বেগের আনুভূমিক এবং উলম্ব উপাংশ বের করি । 

A বিন্দুতে,

বেগের আনুভূমিক উপাংশ, \(v_x=v\)   [যার দিক AB বরাবর]

বেগের উলম্ব উপাংশ, \(v_y=v\;\cos90^o=0\)

E বিন্দুতে,

বেগের আনুভূমিক উপাংশ, \(v_x=v\;\cos\triangle\theta=v\)   [যেহেতু, θ এর মান খুব সামান্য হলে, cosθ=1 ]

বেগের উলম্ব উপাংশ, \(v_y=v\;\sin\triangle\theta\approx v\triangle\theta\)    [যেহেতু, θ এর মান খুব সামান্য হলে, sinθ=θ ]

এখানে, অবস্থানের পরিবর্তনের জন্য বস্তুটির বেগের আনুভূমিক উপাংশের কোন পরিবর্তন হয়নি কিন্তু উলম্ব উপাংশের পরিবর্তন হয়েছে ।

   বেগের উলম্ব উপাংশের পরিবর্তন \(=v\triangle\theta-0=v\triangle\theta\)
   বেগের পরিবর্তনের হার বা ত্বরণ, \(a=\frac{v\triangle\theta}t=v\frac{\triangle\theta}t=v\omega=v\frac vr=\frac{v^2}r\)

সুতরাং, কেন্দ্রমুখী ত্বরণ, \(a=\frac{v\triangle\theta}t=v\frac{\triangle\theta}t=v\omega=v\frac vr=\frac{v^2}r\)

এবং কেন্দ্রমুখী বল, \(F=ma=\frac{mv^2}r\)

তাহলে, যা পাই-

   কেন্দ্রমুখী ত্বরণ, \(a=v\omega=\frac{v^2}r=\frac{\omega^2r^2}r=\omega^2r\)
   কেন্দ্রমুখী বল, \(F=ma=\frac{mv^2}r=\frac{m.\left(\omega r\right)^2}r=\frac{m\omega^2r^2}r=m\omega^2r\)

এই টপিকসের উপর গাণিতিক সমস্যা ।

১। 2kg ভরের একটি গোলক 1m দৈর্ঘ্যের রশির মাথায় বেঁধে প্রতি সেকেন্ডে 10 বার ঘুরানো হচ্ছে । গোলকটির কেন্দ্রমুখী বল এবং ত্বরণ নির্ণয় কর ।

সমাধান

১। 2kg ভরের একটি গোলক 1m দৈর্ঘ্যের রশির মাথায় বেঁধে প্রতি সেকেন্ডে 10 বার ঘুরানো হচ্ছে । গোলকটির কেন্দ্রমুখী বল এবং ত্বরণ নির্ণয় কর ।

সমাধান

গোলকটির ভর, \(m=2kg\)
ঘুর্ণনের ব্যাসার্ধ্য, \(r=1m\)
ঘুর্ণনের কৌণিক বেগ, \(\omega=2\pi\frac Nt=2\pi\frac{10}1=20\pi\;rad\)

তাহলে,
কেন্দ্রমুখী বল, \(F=m\omega^2r=2\times\left(20\pi\right)^2\times1=7895.68\;N\)
কেন্দ্রমুখী ত্বরণ, \(a=\omega^2r=\left(20\pi\right)^2\times1=3947.84\;ms^{-2}\)

টপিকস - 4.7: জড়তার ভ্রামক, জড়তার ভ্রামক সংক্রান্ত উপপাদ্য এবং চক্রগতির ব্যাসার্ধ ।

জড়তার ভ্রামক


যখন কোন দৃঢ় বস্তু একটি নির্দিষ্ট অক্ষে আবদ্ধ থাকে(অক্ষটি বস্তুর ভিতরে বা বাইরে) তখন ঐ বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে আবদ্ধ থাকার কারণে বস্তুটি সরল পথে না গিয়ে বৃত্তাকার পথে ঘুরতে থাকে । অর্থাৎ বস্তুটি অক্ষের চারিদিকে ঘুরতে থাকে বা বস্তুটির কৌণিক সরণ হয় । লক্ষ করবে, বস্তুটি যদি পুরো এক পাক সেই বৃত্তাকার পথে ঘুরে আসে তাহলে তার রৈখিক সরণ শুন্য । কিন্তু বস্তুটি কৌণিকভাবে  পথ অতিক্রম করেছে । অর্থাৎ রৈখিক ভাবে চিন্তা করলে বস্তুটির কোন সরণ বা কাজ হয়নি । কিন্তু কৌণিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে বস্তুটির সরণ এবং কাজ উভয়ই জানা যায় । তাই এ ধরণের কৌণিক গতির জন্য গতিবিদ্যারই একটি শাখা কৌণিক গতির জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক বা সংকেত ব্যবহার করা হয় । গতিবিদ্যায় তোমাদের এ সম্পর্কিত কিছু ধারণা হয়েছে ।

রৈখিক বেগের ক্ষেত্রে আমরা লিখি,  । এখন যখন আমরা কৌণিক বেগ নিয়ে আলোচনা করি তখন বলের জায়গায় আসবে টর্ক, ত্বরণের জায়গায় আসবে কৌণিক ত্বরণ এবং ভরের জায়গায় আসবে জড়তার ভ্রামক । অর্থাৎ একটি বস্তু সরলরেখা বরাবর চললে তার ভরের যে ভূমিকা, কৌণিক গতির জন্য সেই ভূমিকা পালন করবে জড়তার ভ্রামক ।

আর এর গাণিতিক সংজ্ঞা ঠিক এরকম,

কোন বস্তু একটি অক্ষের সাপেক্ষে আবর্তিত হতে থাকলে ঐ অক্ষ সাপেক্ষে বস্তুটির জড়তার ভ্রামক হবে অক্ষ হতে বস্তুটির ভরকেন্দ্রের দূরত্বের বর্গ এবং বস্তুটির ভরের গুনফলের সমান । অর্থাৎ, m ভরের বস্তুটির r দূরত্বে অবস্থিত কোন অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরতে থাকলে তার জড়তার ভ্রামক হবে, 

   \(I=mr^2\)

বাস্তব জগতের কোন বস্তুই যেহেতু এমন সুষম হয় না । তাই এদের ভরকেন্দ্রও সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় না । তাই এক্ষেত্রে বস্তুর প্রতিটি কনা আলাদা আলাদাভাবে চিন্তা করে তাদের জড়তার ভ্রামক নির্ণয় করা হয় ।

মনে কর, বস্তুটি n সংখ্যক কণার সমষ্টি । তাহলে এদের প্রত্যেকটি কণার জড়তার ভ্রামক হবে,

   \(I_1=m_1r_1^2\)
   \(I_2=m_2r_2^2\)
   \(I_3=m_3r_3^2\)
   \(I_4=m_4r_4^2\)
   ———————
   ———————
   \(I_n=m_nr_n^2\)

সুতরাং সমগ্র বস্তুর জড়তার ভ্রামক,
   \(I=m_1r_1^2+m_2r_2^2+m_3r_3^2+………..+m_nr_n^2=\overset n{\underset{i=1}{\sum m_ir_i^2}}\)

এভাবে বস্তুটির জড়তার ভ্রামক নির্ণয় করা যেতে পারে ।

বুঝতেই পারছ, কাজটি সহজ নয় বা সাধারণ গনিত দিয়ে করা সম্ভব নয় । ক্যালকুলাস হচ্ছে গনিতের এমন একটি অংশ যার সাহায্যে যেকোনো বিষয়বস্তুকে অতিক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করে কেটে(ব্যবকলন) তাদের সমষ্টি নির্ণয় (সমাকলন) করা যায় । তাই এক্ষেত্রে ক্যালকুলাসের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন আকৃতির বস্তুর জন্য জড়তার ভ্রামক নির্ণয় করা হয় । তবে এক্ষেত্রে জড়তার ভ্রামক সংক্রান্ত দুইটি উপপাদ্যও রয়েছে প্রয়োজনে এদের সাহায্য ও নেয়া যেতে পারে ।

উপপাদ্য দুইটি হল-

  1. লম্ব অক্ষ উপপাদ্য ।
  2. সমান্তরাল অক্ষ উপপাদ্য ।

লম্ব অক্ষ উপপাদ্য


তুমি যদি একটি বস্তুকে বিভিন্ন দিক বা অক্ষ সাপেক্ষে চিন্তা কর নিশ্চয়ই ভিন্ন ভিন্ন জড়তার ভ্রামক পাবে । মনে কর তুমি বস্তুটির জড়তার ভ্রামক X-অক্ষ সাপেক্ষে নির্ণয় করে পেলে- Ix , Y-অক্ষ সাপেক্ষে নির্ণয় করে পেলে- Iy এবং Z-অক্ষ সাপেক্ষে নির্ণয় করে পেলে Iz । এখন লম্ব অক্ষ উপপাদ্য বলে, তোমার X এবং Y-অক্ষ সাপেক্ষে নির্ণীত জড়তার ভ্রামকের সমষ্টি হবে Z-অক্ষ সাপেক্ষে নির্ণীত জড়তার ভ্রামকের সমান । 

অর্থাৎ,

   \(I_x=mx^2\)
   \(I_y=my^2\)
   \(I_z=mz^2\)

লম্ব অক্ষ উপপাদ্য অনুসারে, \(I_x+I_y=I_z\)

বিবৃতিঃ কোন পাতলা সমতল পাতের তলে অবস্থিত দুটি পরস্পর লম্ব অক্ষ সাপেক্ষে জড়তার ভ্রামকের সমষ্টি ঐ পাতে অবস্থিত দুই অক্ষের ছেদবিন্দুতে অঙ্কিত লম্ব অক্ষ সাপেক্ষে পাতটির জড়তার ভ্রামকের সমান । 

সমান্তরাল অক্ষ উপপাদ্য


মনে কর, M ভরের একটি পাত AB অক্ষ সাপেক্ষে ঘুরছে । এখন এর জড়তার ভ্রামক নির্ণয় করতে হবে । ধর, বস্তুটির ভরকেন্দ্র G এবং ভরকেন্দ্রগামি ও AB এর সমান্তরাল একটি অক্ষ CD নিলে । এখন যদি বস্তুটি CD অক্ষ সাপেক্ষে ঘুরত সেজন্য নিশ্চয়ই একটি জড়তার ভ্রামক পাওয়া যেত ।

ধরে নাও, AB ও CD এর মধ্যবর্তী দূরত্ব = h

এখন,
   CD সাপেক্ষে ঘুরলে জড়তার ভ্রামক \(=I_g\)
   বস্তুর ভর = M
   ভর কেন্দ্রগামি অক্ষ(CD) হতে ঘূর্ণন অক্ষের(AB) দূরত্ব = h

সমান্তরাল অক্ষ উপপাদ্য অনুসারে বস্তুটির জড়তার ভ্রামক, \(I=I_g+Mh^2\)

 বিবৃতিঃ যেকোনো অক্ষের সাপেক্ষে কোন পাতলা সমতল পাতের জড়তার ভ্রামক পাতটির ভরকেন্দ্রগামি তার সমান্তরাল অক্ষের সাপেক্ষে জড়তার ভ্রামক এবং পাতের ভর ও ঐ দুই অক্ষের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের গুনফলের সমষ্টির সমান । 

ক্যালকুলাস প্রয়োগ করে এবং উপপাদ্যদ্বয়ের সাহায্য নিয়ে কিছু বস্তুর জন্য নির্ণীত জড়তার ভ্রামক উল্লেখ করা হলঃ

  • বেলন বা সিলিন্ডারের জন্য, \(I=\frac12mr^2\)
  • নিরেট গোলকের জন্য, \(I=\frac25mr^2\)
  • ফাঁপা গোলকের জন্য, \(I=\frac23mr^2\)
  • সরু সুষম দণ্ডের জন্য, \(I=\frac1{12}ml^2\)
  • আয়তাকার পাতের জন্য, \(I=\frac1{12}m\left(l^2+b^2\right)\)

চক্রগতির ব্যাসার্ধ


কেমন হত, যদি আমরা সব বস্তুর ভরকেন্দ্রের অবস্থান জানতাম ? তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের এত কষ্ট করে বস্তুটি ছোট ছোট করে চিন্তা করার বা ক্যালকুলাস প্রয়োগ করার কোন প্রয়োজনই হত না । সকল বস্তুর ক্ষেত্রেই আমরা ধরে নিতাম,

   বস্তুর ভর = m
   ভরকেন্দ্র হতে ঘূর্ণন অক্ষের দূরত্ব = k

তাহলে বস্তুটির জড়তার ভ্রামক, \(I=mk^2\)

নির্ণীত এ মান নিশ্চয়ই পূর্বে ক্যালকুলাস প্রয়োগ করে নির্ণীত মানের সমান হত ।

মনে কর, আমরা ঘূর্ণন অক্ষ একটি জানা দূরত্বে বস্তুটির সমগ্র ভর কেন্দ্রীভূত আছে বা ভরকেন্দ্র ধরে নিলাম ও জড়তার ভ্রামক নির্ণয় করলাম এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে এই নির্ণীত মান ও পূর্বে নির্ণীত জড়তার ভ্রামকের মান মিলে গেল । তাহলে আমরা যে বিন্দুতে বস্তুটির ভর কেন্দ্রীভূত আছে ধরে নিলাম ঘূর্ণন অক্ষ হতে সেই বিন্দুর দূরত্বকে বলা হয় ঐ বস্তুর চক্রগতির ব্যাসার্ধ ।

তাহলে আমরা এই ধারণা এবং পূর্বের ক্যালকুলাসের মাধ্যমে নির্ণীত জড়তার ভ্রামকের সাহায্যে ভরকেন্দ্রের দূরত্ব বা চক্রগতির ব্যাসার্ধ নির্ণয় করতে পারি ।

যেহেতু আমাদের আমাদের প্রত্যেকটি বস্তুর জন্যই ভরকেন্দ্র জানা, সুতরাং- 

  • বেলন বা সিলিন্ডারের জন্য,

   \(I=mk^2=\frac12mr^2\)
সুতরাং \(k=\frac r{\sqrt2}\)

  • নিরেট গোলকের জন্য,

   \(I=mk^2=\frac25mr^2\)
সুতরাং \(k=\sqrt{\frac25}r\)

  • ফাঁপা গোলকের জন্য,

   \(I=mk^2=\frac23mr^2\)
সুতরাং \(k=\sqrt{\frac23}r\)

  • সরু সুষম দণ্ডের জন্য,

   \(I=mk^2=\frac1{12}ml^2\)
সুতরাং \(k=\frac l{2\sqrt3}\)

  • আয়তাকার পাতের জন্য,

   \(I=mk^2=\frac1{12}m\left(l^2+b^2\right)\)
সুতরাং \(k=\frac{\sqrt{l^2+b^2}}{2\sqrt3}\)

তাহলে জড়তার ভ্রামক নিয়ে যা পাওয়া গেল,

  • বেলন বা সিলিন্ডারের জন্য, \(k=\frac r{\sqrt2}\)
  • নিরেট গোলকের জন্য, \(k=\sqrt{\frac25}r\)
  • ফাঁপা গোলকের জন্য, \(k=\sqrt{\frac23}r\)
  • সরু সুষম দণ্ডের জন্য, \(k=\frac l{2\sqrt3}\)
  • আয়তাকার পাতের জন্য, \(k=\frac{\sqrt{l^2+b^2}}{2\sqrt3}\)
এই টপিকসের উপর গাণিতিক সমস্যা ।

১। 2kg ভরের এবং 10cm ব্যাসার্ধ্যের একটি নিরেট গোলক 30°  কোণে ঢালু 20m দীর্ঘ্য একটি তল বেঁয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ভুমিতে এসে পড়ল । গোলকটি কত রৈখিক বেগে ভূমিতে এসে আঘাত করবে ?

সমাধান

১। 2kg ভরের এবং 10cm ব্যাসার্ধ্যের একটি নিরেট গোলক 30°  কোণে ঢালু 20m দীর্ঘ্য একটি তল বেঁয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ভুমিতে এসে পড়ল । গোলকটি কত রৈখিক বেগে ভূমিতে এসে আঘাত করবে ?

সমাধান

এখানে,
   \(\sin\theta=\frac hx\)
   \(h=x\times\sin\theta=20\times\sin30^o=10\;m\)

তাহলে,
   \(mgh=\frac12mv^2+\frac12I\omega^2\)
   \(mgh=\frac12mv^2+\frac12\times\frac25mr^2\times\omega^2\)
   \(mgh=\frac12mv^2+\frac15\times m(\omega r)^2\)
   \(mgh=\frac12mv^2+\frac15\times mv^2=mv^2\left(\frac12+\frac15\right)=mv^2\left(\frac{5+2}{10}\right)=\frac7{10}mv^2\)
   \(2\times9.8\times10=\frac7{10}\times2\times v^2\)
   \(v=11.83\;ms^{-1}\)

সুতরাং গোলকটি \(11.83\;ms^{-1}\) বেগে ভূমিতে এসে আঘাত করবে । 

টপিকস - 4.8: কৌণিক গতির গতীয় চলরাশি, কৌণিক ভরবেগ, টর্ক এবং নিউটনের সূত্র ।

কৌণিক গতির জন্য গতীয় চলরাশি


কৌণিক গতি সম্পর্কে আমরা গতিবিদ্যায় অনেক কিছুই জেনে এসেছি । এ অধ্যায়ে আমরা এর পরবর্তী এবং নিউটনের সূত্রে এর প্রয়োগ গুলো নিয়ে জানবো । তাই এটি অধ্যয়নের পূর্বে গতিবিদ্যা থেকে কৌণিক গতির আলোচনা টুকু অবশ্যই আর একবার দেখে নিতে হবে ।  গতিবিদ্যা অধ্যায়ে আমরা যে সব সম্পর্ক জেনে এসেছি তা হল,

   \(s=r\theta\)
   \(\omega=\frac\theta t=\frac{2\pi}T=2\pi f=2\pi\frac Nt\)
   \(\alpha=\frac\omega t\)
   \(v=\omega r\)
   \(a=\alpha r\)

একটি বস্তু বৃত্তাকার পথে পুরো এক পাক ঘুরে আসলে তার অতিক্রান্ত রৈখিক দূরত্ব \(=2\pi r\) ; কৌণিক দূরত্ব \(=2\pi\) এবং এর জন্য যে সময় লাগে তাকে আমরা বলি পর্যায়কাল, t=T 

কৌণিক ভরবেগ

ঘূর্ণনরত কোন বস্তুকণার ব্যাসার্ধ ভেক্টর এবং রৈখিক ভরবেগের ভেক্টর গুণফলকে বলা হয় কৌণিক ভরবেগ । রৈখিকের ভরবেগের মতই কৌণিক ভরবেগও একটি সাধারণ রাশি । তাহলে একটি বস্তু যদি r ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার পথে p ভরবেগ নিয়ে ঘুরতে থাকে তাহলে তার কৌণিক ভরবেগ L হবে,

   \(\overrightarrow L=\overrightarrow r\times\overrightarrow p=rp\;\sin\theta.\widehat\eta\)  [যেখানে θ হল \(\overrightarrow r\) এবং \(\overrightarrow p\) এর মধ্যবর্তী কোণ]

ভরবেগের মান, \(L=rp\;\sin\theta\)

যেহেতু, p এর দিক বৃত্তাকার পথের স্পর্শক বরাবর এবং r এর দিক বৃত্তের কেন্দ্র বরাবর তাই θ এর মান সর্বদাই 90° হয় । তাহলে আমরা পাই,

   \(L=rp\;\sin90^o=rp=r.mv=mvr=r.m.\omega r=mr^2\omega=I\omega\)

লক্ষ কর, রৈখিক বেগের ক্ষেত্রে রৈখিক ভরবেগ হল ভর এবং রৈখিক বেগের গুণফল । এখানে কৌণিক বেগের ক্ষেত্রে কৌণিক ভরবেগ হল জড়তার ভ্রামক এবং কৌণিক বেগের গুণফল । অর্থাৎ কৌণিক বেগের ক্ষেত্রে ভরের ভূমিকা পালন করবে জড়তার ভ্রামক ।

টর্ক


ঘূর্ণনরত কোন বস্তুকণার ব্যাসার্ধ ভেক্টর এবং রৈখিক বলের ভেক্টর গুণফলকে বলা হয় কৌণিক বল বা টর্ক । তাহলে একটি বস্তুতে যদি F বলের ক্রিয়ায় বস্তুটি r ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার পথে ঘুরতে থাকে তাহলে তার টর্ক  হবে,

   \(\overrightarrow\tau=\overrightarrow r\times\overrightarrow F=rF\;\sin\theta.\widehat\eta\)  [যেখানে θ হল \(\overrightarrow r\) এবং \(\overrightarrow F\) এর মধ্যবর্তী কোণ]

টর্কের মান, \(\tau=rF\;\sin\theta\)

যেহেতু, F বা বল প্রয়োগের দিক বৃত্তাকার পথের স্পর্শক বরাবর এবং r এর দিক বৃত্তের কেন্দ্র বরাবর তাই θ এর মান সর্বদাই 90° হয় । তাহলে আমরা পাই,

   \(\tau=rF\;\sin90^o=rF=r.ma=r.m.\alpha r=mr^2\alpha=I\alpha\)

এখানেও লক্ষ কর, রৈখিক বলের ক্ষেত্রে রৈখিক বল হল ভর এবং রৈখিক ত্বরণের গুণফল । এখানে কৌণিক বলের ক্ষেত্রে কৌণিক বল বা টর্ক হল জড়তার ভ্রামক এবং কৌণিক ত্বরণের গুণফল । অর্থাৎ কৌণিক বেগের ক্ষেত্রে ভরের ভূমিকা পালন করবে জড়তার ভ্রামক ।

এভাবে তুলনা করে তোমরা রৈখিক বলবিদ্যার ন্যায় কৌণিক বলবিদ্যার রাশি এবং সূত্রগুলোকেও মনে রাখতে পার । এরূপ কিছু সম্পর্ক নিম্নে তুলে ধরা হল-

কৌণিক গতির ক্ষেত্রে নিউটনের সূত্রাবলি


আমরা এতক্ষণ কৌণিক বলবিদ্যার ক্ষেত্রে রৈখিক বলকে কৌণিকের ক্ষেত্রে বলেছি টর্ক, রৈখিক ভরবেগকে বলেছি কৌণিক ভরবেগ, রৈখিক ত্বরণকে বলেছি কৌণিক ত্বরণ, রৈখিক বেগকে বলেছি কৌণিক বেগ । এই কথা গুলো শুধু পরিবর্তন করে আমরা নিউটনের সূত্রগুলোকে কৌণিকের জন্য উল্লেখ করতে পারি । এগুলো হল-

নিউটনের প্রথম সূত্রঃ বাহ্যিক কোন টর্ক ক্রিয়া না করলে স্থির বস্তু স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সুষম কৌণিক বেগে বৃত্তাকার পথে ঘুরতে থাকবে ।

অর্থাৎ, \(\omega=\omega_0\)

নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রঃ বস্তুর কৌণিক ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার উপর প্রযুক্ত টর্কের সমানুপাতিক । টর্ক যেদিকে ক্রিয়া করে কৌণিক ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে ।

অর্থাৎ, \(\tau\propto\left(I\omega-I\omega_0\right)\)

নিউটনের তৃতীয় সূত্রঃ প্রত্যেক ক্রিয়ামূলক টর্কের একটি প্রতিক্রিয়ামূলক টর্ক আছে ।

অর্থাৎ, \(\tau_1=-\tau_2\)

রৈখিক গতির বলবিদ্যার ক্ষেত্রে নিউটনের সূত্রগুলো নিয়ে যেসকল প্রয়োগ শিখেছ কৌণিকের সূত্র গুলো দিয়েও সেরুপ প্রয়োগ নিজেরাই চেষ্টা কর ।

এই টপিকসের উপর গাণিতিক সমস্যা ।

১। 500g ভরের একটি গোলককে 1m দৈর্ঘ্যের একটি সুতায় বেঁধে প্রতি সেকেন্ডে 10 বার ঘুরানো হচ্ছে। ঘূর্ণনের রৈখিক বেগ, জড়তার ভ্রামক, কৌণিক ভরবেগ এবং ক্রিয়াশীল টর্ক নির্ণর কর ।

সমাধান

১। 500g ভরের একটি গোলককে 1m দৈর্ঘ্যের একটি সুতায় বেঁধে প্রতি সেকেন্ডে 10 বার ঘুরানো হচ্ছে। ঘূর্ণনের রৈখিক বেগ, জড়তার ভ্রামক, কৌণিক ভরবেগ এবং ক্রিয়াশীল টর্ক নির্ণর কর ।

সমাধান

বস্তুর ভর, m=0.5g
ঘুর্ণনের ব্যাসার্ধ্য, r=1m
কৌণিক বেগ, \(\omega=2\pi\frac Nt=2\pi\frac{10}1=20\pi\;rad/s\)

সুতরাং
রৈখিক বেগ, \(v=\omega r=20\pi\times1=20\pi\;m/s\)
জড়তার ভ্রামক, \(I=mr^2=0.5\times1^2=0.5\;kg.m^2\)
কৌণিক ভরবেগ, \(L=mvr=0.5\times20\pi\times1=10\pi\;kgm^2s^{-1}\)
টর্ক, \(\tau=I\alpha=I\times\frac\omega t=0.5\times\frac{20\pi}1=10\pi\;Nm\)

এই অধ্যায়ের উপর অতিরিক্ত গাণিতিক সমস্যা ।
  1. 50 N এর একটি বল 10 kg ভরের একটি স্থির বস্তুর উপর ক্রিয়া করে । যদি 4sec পর বলটি ক্রিয়া না করে তবে প্রথম হতে 8sec এ বস্তুটি কত দূরত্ব অতিক্রম করবে ? (উত্তরঃ 120m)
  2. 20 kg ভরের একটি বস্তুর উপর কি পরিমাণ বল ক্রিয়া করলে তার বেগ 10 sec এ \(\left(4\widehat i-5\widehat j+3\widehat k\right)\) ms-1 হতে বৃদ্ধি পেয়ে \(\left(8\widehat i+3\widehat j-5\widehat k\right)\) ms-1 হবে ?    (উত্তরঃ 6N)
  3. একটি রকেট প্রতি সেকেন্ডে 7.4 kg জ্বালানী খরচ করে । রকেট থেকে নির্গত গ্যাসের বেগ 2.5×103 ms-1 হলে রকেটের উপর কত বল ক্রিয়া করে ? (উত্তরঃ 1.85×104 N)
  4. কি পরিমাণ টর্কের ক্রিয়ায় 250 kgm2 জড়তার ভ্রামকের কৌণিক ত্বরণ 4 rads-2 হবে ? (উত্তরঃ 1000Nm)
  5. সমত্বরণে ধাবমান 3 kg ভরের একটি বস্তু এর গতির 5th sec ও 8th sec এ যথাক্রমে 0.18 m ও 0.30 m দূরত্ব অতিক্রম করে । ক্রিয়াশীল বলের মান নির্ণয় কর । (উত্তরঃ 0.12N)
  6. 5 kg ভরের একটি বন্দুক হতে 0.01 kg ভরের একটি গুলি 400 ms-1 বেগে বের হয়ে গেল । বন্দুকের পশ্চাৎ বেগ নির্ণয় কর । (উত্তরঃ 0.80ms-1)
  7. 200 kg ভরের একটি মোটর গাড়ি ঘন্টায় 108 km বেগে চলে । ব্রেকের সাহায্যে গাড়িটিকে 20 m দূরত্বে থামিয়ে দেওয়া হলো । বাঁধাদানকারী বলের মান বের কর । (উত্তরঃ 4500N)
  8. 5 টনের একটি ট্রাক ঘন্টায় 36 km বেগে চলছে । এটি 4 m দূরত্বে থামাতে হলে কত বলের প্রয়োজন হবে ? (উত্তরঃ 62500N)
  9. স্থিরাবস্থা থেকে 40 kg ভর বিশিষ্ট কোনো বস্তু নির্দিষ্ট বলের ক্রিয়ার ফলে 2 sec পর 15 ms-1 বেগ অর্জন করে । এর ওপর কি পরিমাণ বল কাজ করছে এবং 4 sec পর এর গতিশক্তি কত হবে ? (উত্তরঃ 300N; 18000J)
  10. 0.3 kg ভরের রাইফেলের গুলি 30 ms-1 বেগে বের হয়ে গেল । রাইফেলটি যদি 0.6 ms-1 বেগে পশ্চাৎ দিকে আসতে চায় তবে রাইফেলের ভর নির্ণয় কর । (উত্তরঃ 15kg)
  11. 900 kg ভরের একটি ট্রাক ঘন্টায় 60 km বেগে চলে । ব্রেক চেপে ট্রাকটিকে 50 m দূরে থামানো হলো । যদি মাটির ঘর্ষণজনিত বল 200 N হয়, তবে ব্রেক জনিত বলের মান নির্ণয় কর । (উত্তরঃ 2300N)
  12. 500 kg ভরের একটি গাড়ি 20 ms-1 বেগে চলছিল । একটি বিরুদ্ধ বল প্রয়োগে গাড়িটিকে 50 m দূরে থামানো হলে (i) বিরুদ্ধ বলের মান ও (ii) যে সময় পরে গাড়িটি থামবে তা নির্ণয় কর । (উত্তরঃ 2000N; 5sec)
  13. একটি গতিশীল বস্তুর বিরুদ্ধে 25 N বল প্রয়োগ করায় 12 m দূরত্বে বস্তুটির গতিবেগ অর্ধেক হয় । বস্তুটির ভর 5kg হলে প্রাথমিক বেগ কত ? কতক্ষণ ধরে  বল ক্রিয়া করে তা নির্ণয় কর ।  (উত্তরঃ 12.65ms-1; 2.5sec)
  14. 5 kg ভরের একটি বন্দুকের নল থেকে 80 g ভরের একটি গুলি নির্গত হলে বন্দুকের প্রতিক্ষেপ বেগ হয় 64 ms-1 । গুলির প্রাথমিক বেগ কত ? গুলি লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে 50 cm প্রবেশ করে স্থিরাবস্থায় আসে । গুলির ওপর প্রযুক্ত বাঁধা নির্ণয় কর । (উত্তরঃ 400ms-1 ;1280N)
  15. 50 g ভরের একটি বুলেট 400 ms-1 প্রাথমিক বেগে একটি দেওয়ালকে 4×104 N গড় বলের সাহায্যে ভেদ করে 50 ms-1 বেগে তা দেয়াল থেকে বের হয়ে যায় । দেয়ালটির বেধ কত ? (উত্তরঃ 9.84cm)
  16. 2 kg ভরের একটি বস্তুকে একটি স্প্রিং তুলা থেকে ঝুলানো আছে । যখন তুলাটি (i) 5 ms-2 ত্বরণে ওপরে উঠে এবং (ii) একই ত্বরণে নিচে নামে তখন স্প্রিং তুলা টি কত পাঠ দিবে ? [g=10 ms-2] (  (উত্তরঃ (i) 3kg (ii) 1kg)
  17. 60 kg ভর বিশিষ্ট এক ব্যক্তি লিফটে করে 4 ms-2 ত্বরণে নিচে নামছে । লোকটি লিফটের মেঝেতে কি পরিমাণ বল প্রয়োগ করবে ? লিফটটি যদি একই ত্বরণে ওপরে উঠতে থাকে তাহলে ঐ ব্যক্তি কত প্রতিক্রিয়া বল অনুভব করবে ? (উত্তরঃ 6N; 590.4N)
  18. 8 kg ভরের একটি বস্তু 8 ms-1 বেগে চলছে । বস্তুটি 20 sec সময়ে থামাতে হলে কত বল প্রয়োগ করতে হবে ? (উত্তরঃ 3.2N)
  19. 1500 kg ভরের একটি কামান থেকে 60 kg ভরের একটি গোলা 50 ms-1 বেগে ছোড়া হলো। কামান টি কত বেগে পিছনে সরে আসবে? [g=10 ms-2](উত্তরঃ 2 ms-1)
  20. 4 g বায়ু পূর্ণ একটি বেলুন থেকে ছিদ্র পথে 5 ms-1 বেগে বায়ু নির্গত হয় এবং 0.5 s সময়ে সম্পূর্ণ বায়ু শূন্য হয়। বেলুনের ওপর কত বল ক্রিয়া করে? (উত্তরঃ 0.04N)
  21. 70 kg ওজনের একজন বিমানছত্র ব্যবহারকারী সমবেগে নিচের দিকে নামছে। তার ওপর বায়ু বাঁধা কত? (উত্তরঃ 686N)