আলোর প্রতিফলন
আলো চলার পথে কোনো অস্বচ্ছ তলে বাঁধা পেয়ে দিক পরিবর্তন করা বা আলো মাধ্যম পরিবর্তনের সময় মাধ্যমন্বয়ের বিভেদ তল থেকে এর কিছু অংশ প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসাকে আলোর প্রতিফলন বলে।
দর্পণ
যে মসৃণ তলে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন হয় তাকে দর্পণ বলে।
গোলীয় দর্পণ
কোনো মসৃণ গোলক পৃষ্ঠের অংশবিশেষ থেকে যদি আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে তবে তাকে গোলীয় দর্পণ বলে।
উত্তল দর্পণ
যে গোলীয় দর্পণের বাইরের পৃষ্ঠ বা উত্তল পৃষ্ঠ প্রতিফলক হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাকে উত্তল দর্পণ বলে।
অবতল দর্পণ
যে গোলীয় দর্পণের ভিতরের পৃষ্ঠ বা অবতল পৃষ্ঠ প্রতিফলক হিসেবে ব্যবহূত হয় তাকে অবতল দর্পণ বলে।
আলোর প্রতিফলনের প্রথম সূত্র
আপতিত রশ্মি, প্রতিফলিত রশ্মি এবং আপতন বিন্দুতে প্রতিফলক পৃষ্ঠের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে অবস্থান করে।
আলোর প্রতিফলনের ২য় সূত্র
আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণ সর্বদা সমান হয়।
আলোর প্রতিসরণ
এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে আলো অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে যাওয়াকে আলোর প্রতিসরণ বলে। মাধ্যম দুটির বিভেদ তলে আলো তির্যকভাবে আপতিত হলে প্রতিসরণের পর এর দিকের পরিবর্তন ঘটে।
আলোর প্রতিসরণের ১ম সূত্র
আপতিত রশ্মি, প্রতিসৃত রশ্মি এবং আপতন বিন্দুতে বিভেদতলের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে অবস্থান করে।
আলোর প্রতিসরণের ২য় সূত্র (স্নেলের সূত্র)
এক জোড়া নির্দিষ্ট মাধ্যম ও একটি নির্দিষ্ট বর্ণের আলোক রশ্মির বিভেদতলে তির্যক আপতনের জন্য আপতন কোণের sine ও প্রতিসরণ কোণের sine-এর অনুপাত একটি ধ্রুব সংখ্যা।
আপেক্ষিক প্রতিসরণাঙ্কক
এক জোড়া নির্দিষ্ট মাধ্যম ও একটি নির্দিষ্ট বর্ণের আলোর জন্য আপতন কোণের sine ও প্রতিসরণ কোণের sine-এর অনুপাতকে ঐ নির্দিষ্ট বর্ণের জন্য প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের আপেক্ষিক প্রতিসরণাঙ্ক বলে।
পরম প্রতিসরণাঙ্ক
শূন্য মাধ্যম থেকে কোনো নির্দিষ্ট মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বর্ণের আলোর তির্যক আপতনের ক্ষেত্রে আপতন কোণের sine ও প্রতিসরণ কোণের sine-এর অনুপাতকে ঐ নির্দিষ্ট বর্ণের জন্য ঐ নির্দিষ্ট মাধ্যমের পরম প্রতিসরণাঙ্ক বলে।
সংকট কোণ
একটি নির্দিষ্ট বর্ণের আলোক রশ্মি ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে প্রতিসরণের সময় আপতন। কোণের যে মানের জন্য প্রতিসরণ কোণ এক সমকোণ হয় বা প্রতিসূত রশ্মি বিভেদ তলের গা ঘেঁষে নির্গত হয়, তাকে ঐ দুটি নির্দিষ্ট মাধ্যম ও ঐ নির্দিষ্ট বর্ণের জন্য হালকা মাধ্যমের সাপেক্ষে ঘন মাধ্যমের সংকট কোণ বলে।
পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন
আলোক রশ্মি ঘন ও হালকা মাধ্যমের বিভেদ তলে ঘন মাধ্যম থেকে সংকট কোণ অপেক্ষা বড় কোণে আপতিত হলে প্রতিসরিত না হয়ে প্রতিফলনের সূত্রানুযায়ী সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলিত হওয়াকে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন বলে।
ফার্মাটের নীতি
আলোক রশ্মি এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে যাবার সময় সম্ভাব্য সকল পথের মধ্যে সেই পথ অনুসরণ করে যে পথে সময় সব থেকে কম লাগে।
প্রতিবিম্ব
কোনো বিন্দু বা বস্তু থেকে নিঃসৃত আলোকরশ্মিগুচ্ছ প্রতিফলন বা প্রতিসরণের পর যদি দ্বিতীয় কোনো বিন্দুতে মিলিত হয় বা দ্বিতীয় কোনো বিন্দু থেকে নিঃসৃত হচ্ছে বলে মনে হয় তবে ঐ দ্বিতীয় বিন্দুকে প্রথম বিন্দুর প্রতিবিম্ব বলে।
লেন্স
যদি কোনো স্বচ্ছ সমসত্ত্ব প্রতিসারক মাধ্যমের দুটি বিপরীত পৃষ্ঠের কমপক্ষে একটি পৃষ্ঠ গোলীয় হয়, এবং এ তলছয়ের একটির মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশ করে অপরটি দিয়ে নির্গত হতে পারে, তবে তাকে লেন্স বলে।
উত্তল বা স্থুল মধ্য বা অভিসারী লেন্স
যেসব লেন্সের প্রান্তভাগ অপেক্ষা মধ্যভাগ পুরু তাদেরকে স্থূল মধ্য লেন্স বা উত্তল লেন্স বা অভিসারী লেন্স বলে।
অবতল বা ক্ষীণ মধ্য বা অপসারী লেন্স
যেসব লেন্সের প্রান্তভাগ অপেক্ষা মধ্যভাগ সরু তাদেরকে ক্ষীণ মধ্য লেন্স বা অবতল লেন্স বা অপসারী লেন্স বলে।
প্রধান অক্ষ
লেন্সের উভয় পৃষ্ঠের বক্রতার কেন্দ্রগামী সরলরেখাকে ঐ লেন্সের প্রধান অক্ষ বলে।
প্রথম প্রধান ফোকাস
প্রধান অক্ষের উপরিস্থত যে বিন্দু থেকে নির্গত অপসারী রশ্মিগুচ্ছ বা যে বিন্দুর দিকে অভিসারী রশ্মিগুচ্ছ লেন্সে আপতিত হয়ে প্রধান অক্ষের সমান্তরালে প্রতিসৃত হয় তাকে উক্ত লেন্সের প্রথম প্রধান ফোকাস বলে।
দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস
প্রধান অক্ষের সমান্তরাল আলোক রশ্মি লেন্সে আপতিত হয়ে প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের উপরিস্থত যে বিন্দুতে মিলিত হয় বা প্রধান অক্ষের উপরিস্থত যে বিন্দু থেকে ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে হয়, তাকে উক্ত লেন্সের দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস বলে।
আলোক কেন্দ্র
লেন্সের মধ্য দিয়ে প্রতিসরণের সময় আপতিত রশ্মি ও নির্গত রশ্মি পরস্পর সমান্তরাল হলে রশ্মিটি প্রধান অক্ষকে যে বিন্দুতে ছেদ করে, তাকে উক্ত লেন্সের আলোক কেন্দ্র বলে।
ফোকাস দূরত্ব
আলোক কেন্দ্র থেকে প্রধান ফোকাস পর্যন্ত দূরত্বকে ফোকাস দূরত্ব বলে।
ফোকাস তল
লেন্সের প্রধান ফোকাসগামী এবং প্রধান অক্ষের উপর লম্ব তলকে ফোকাস তল বলে।
রৈখিক বিবর্ধন
প্রতিবিম্বের দৈর্ঘ্য ও লক্ষ্যবস্তুর দৈর্ঘ্যের অনুপাতকে রৈখিক বিবর্ধন বলে।
লেন্সের ক্ষমতা
একগুচ্ছ সমান্তরাল রশ্মিকে লেন্সের অভিসারী বা অপসারী করার যোগ্যতা বা সামর্থ্যকে উত্ত লেন্সের ক্ষমতা বলে।
লেন্সের সংযোজন বা সমবায়
একাধিক লেন্সকে যদি পরস্পরের সংস্পর্শে এমনভাবে রাখা যায় যাদের প্রধান অক্ষ একই সরল রেখায় থাকে তবে একে লেন্সের সংযোজন বা সমবায় বলে।
তুল্য লেন্স
সংযোজিত লেন্সের স্থানে যদি এমন একটি লেন্স স্থাপন করা হয় যেন এ লেন্সটির ফোকাস দূরত্ব উত্ত সংযোজিত লেন্সের ফোকাস দূরত্বের সমান তবে এ লেন্সটিকে বলা হবে উত্ত সংযোজিত লেন্সের তুল্য লেন্স।
বীক্ষণ যন্ত্র
যেসব যন্ত্র কোনো ক্ষুদ্র বা দূরের বস্তু দেখার ব্যপারে আমাদেরকে সহায়তা করে তাকে বীক্ষণ যন্ত্র বা দৃষ্টি সহায়ক যন্ত্র বলে।
বীক্ষণ কোণ
কোনো বস্তুর দুই প্রান্ত চক্ষু লেন্সে যে কোণ উৎপন্ন করে তাকে বীক্ষণ কোণ বা দৃষ্টি কোণ বলে।
কৌণিক বিবর্ধন
প্রতিবিম্ব কর্তৃক সৃষ্ট বীক্ষণ কোণ ও বস্তু কর্তৃক সৃষ্ট বীক্ষণ কোণের অনুপাতকে কৌণিক বিবর্ধন বলে।
অণুবীক্ষণ যন্ত্র
যে যন্ত্রের সাহায্যে নিকটবর্তী ক্ষুদ্র বস্তুকে অনেক বড় করে দেখা যায় তাকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলে।
দূরবীক্ষণ যন্ত্র
যে যন্ত্রের সাহায্যে অনেক দূরের বস্তুকে স্পষ্ট দেখা যায় তাকে দূরবীক্ষণ যন্ত্র বলে।
প্রিজম
যদি একটি স্বচ্ছ সমসত্ত্ব প্রতিসারক মাধ্যমের দুটি হেলানো সমতল পৃষ্ঠ থাকে, যার একটির মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশ করে অপরটি দিয়ে নির্গত হতে পারে, তবে তাকে প্রিজম বলে।
বিচ্যুতি কোণ
প্রিজমে প্রতিসরণের ক্ষেত্রে আপতিত রশ্মির গতিপথ যে কোণে বেঁকে নির্গত হয় অর্থাৎ আপতিত রশ্মি ও নির্গত রশ্মির মধ্যবর্তী কোণকে বিচ্যুতি কোণ বলে।
ন্যূনতম বিচ্যুতি
আপতন কোণের মান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করতে থাকলে বিচ্যুতি কোণের মান কমতে কমতে একটি সর্বনিম্ন মানে পৌছে এবং তারপর বৃদ্ধি পেতে থাকে, বিচ্যুতি কোণের এ সর্বনিম্ন মানকে ন্যূনতম বিচ্যুতি বলে।
সরু প্রিজম
যে প্রিজমের প্রিজম কোণ 6° অপেক্ষা কম তাকে সরু প্রিজম বলে।
বিচ্ছুরণ ও বর্ণালি
যৌগিক বর্ণের আলো মৌলিক বর্ণে বিভক্ত হওয়াকে আলোর বিচ্ছুরণ বলে। আলোর বিচ্ছুরণের ফলে মৌলিক বর্ণের যে পট্টি বা বিন্যাস পাওয়া যায় তাকে বর্ণালি বলে।
কৌণিক বিচ্ছুরণ
দুই প্রান্তীয় বর্ণ তথা বেগুণি ও লাল বর্ণের বিচ্যুতির পার্থক্যকে কৌণিক বিচ্ছুরণ বলে।
বিচ্ছুরণ ক্ষমতা
দুই প্রান্তীয় বর্ণ তথা বেগুনি ও লাল বর্ণের কৌণিক বিচ্ছুরণ ও এদের মধ্যম বর্ণের বিচ্যুতির অনুপাতকে বিচ্ছুরণ ক্ষমতা বলে।